টিকটক করতে ফটোগ্রাফারকে হত্যা করে ক্যামেরা ছিনতাই, গ্রেফতার ১০

একটি টিকটক গ্রুপের প্রধান নাঈম আহম্মেদ। গ্রুপের সবাই রাজধানীর রায়েরবাজার ও আশেপাশের এলাকায় ভাসমান। মোবাইল দিয়ে টিকটক করলে রেজুলেশন ভালো না হওয়ায় তারা ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ফেসবুকে ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামের (২৬) পেজ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে তারা। পরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কথা বলে হাজারীবাগ থানার জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় নিয়ে হত্যার পর নূরুল ইসলামের ক্যামেরা নিয়ে পালিয়ে যায়।

বুধবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানী মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।

এর আগে মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেফতার করে হাজারিবাগ থানা-পুলিশ।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– মো.নাঈম আহম্মেদ (২০), মো. শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), মো. শাহীন চৌকিদার (২২), মো. রহিম সরকার (১৯), মো. নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), মো. আনোয়ার হোসেন (১৯), মো. শহিদুল ইসলাম (২০) ও মো. আরমান (১৮)। গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাই করা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়।

মাসুদ আলম বলেন, মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম পেশায় ফটোগ্রাফার। তিনি বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তোলার কাজ করতেন। গত ১৫ মে অজ্ঞাত একটি মোবাইল নম্বর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, বিয়ের ছবি তোলার জন্য ৫০০ টাকা বিকাশে অগ্রিম পাঠানো হয়। ১৬ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নূরুল তার সহকারি ইমন ওরফে নুরে আলমের সঙ্গে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে তাদের সঙ্গে মো.নাঈম আহম্মেদ দেখা করে। পরে অটোরিকশায় রায়েরবাজার জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা করে তারা।

তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছামাত্র শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান তাদের রিকশার গতিরোধ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে গেলেও নুরুলকে ধরে ফেলে তারা। ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সঙ্গে থাকা দুটি ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। নুরুলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে নূরুলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নূরুলের বড় ভাই ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা সবাই ১৮-২০ বছর বয়সী জানিয়ে ডিসি আরও বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। এরপর মঙ্গলবার ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে রাজধানীর শংকর ও রায়েরবাজার এবং আশুলিয়া, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও তারাকান্দা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।