ধরা এবং ওয়াটারকিপার্স-এর উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি

বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট, বাগেরহাটের মোংলা, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও হবিগঞ্জে স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র‍্যালি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার ধরা ও স্থানীয় গণমাধ্যম সিলেট ভয়েস যৌথভাবে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে বক্তারা সিলেট নগরীর প্রাকৃতিক ছড়া ও সুরমা নদীর তলদেশ ভরাটের কারণে অতিবৃষ্টিকে জলাবদ্ধতার জন্য, ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণ ও বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। ধরা সিলেটের আহ্বায়ক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন, পরিবেশ অধিদফতর সিলেটের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আক্তার প্রমুখ।

বুধবার ধরা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে চরদুয়ানী ইউনিয়নের হোগলাপাশা ৪৪৯ আবাসনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নিতকরণ, সাগর-নদীর প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ, পরিবেশ সুরক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ, আবাসনের পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতামূলক র‍্যালি ও আলোচনা সভা হয়। পরে বৃক্ষরোপণ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনোজ কুমার কীর্তনীয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পাথরঘাটা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রভাষক আহসান হাবীব, সমাজকর্মী মেহেদী সিকদার, সুন্দরবন যুব ফোরামের সভাপতি ইমরান হোসেন, তারুণ্যের বাংলাদেশ যুব সংস্থার সভাপতি সোয়েব তাসিন, ধরা পাথরঘাটার সমন্বয়ক উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।

বাগেরহাটের মোংলায় বুধবার সকালে ধরা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ও সার্ভিস বাংলাদেশের আয়োজনে মেরিন ড্রাইভ রোডে প্রতীকী প্লাস্টিক বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, মোংলা পোর্ট পৌরসভার ডাম্পিং করা প্লাস্টিক পলিথিন বর্জ্য থেকে সুন্দরবন, নদ-নদী ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। গবেষণায় পশুর ও মোংলা নদীর ১৭ প্রজাতির মাছে মাইক্রো প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। এসব মাছ খাওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। যার পরিণাম মৃত্যু। তাই প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করার এখনই সময়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মো. নূর আলম শেখ। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ধরা’র কমলা সরকার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের আব্দুর রশিদ হাওলাদার, সার্ভিস বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র হাছিব সরদার, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার মেহেদী হাসান।
 
বুধবার বেলা ১১ টায় আন্ধারমানিক নদীর তীরে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও স্থানীয় সংগঠন আমরা কলাপাড়াবাসী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কলাপাড়ার সহযোগিতায় আন্ধারমানিক নদী দূষণ বন্ধে মানববন্ধন ও  শিশুদের অংশ গ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ সংগঠক মেজবাহউদ্দিন মান্নু, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও পরিবেশ কর্মী মোস্তফা জামান সুজন, কামাল হাসান রনি, নজরুল ইসলাম, তানজিল জামান জয় ও নাজমুস সাকিব প্রমুখ। বক্তারা আন্ধারমানিক নদী দূষণ বন্ধে প্লাস্টিক বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। মানববন্ধন শেষে শিশুদের অংশগ্রহণে নদীর পাড়ে পরিবেশ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ফলজ গাছের চারা বিতরণ করা হয়। 

বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ধরা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারের উদ্যোগে ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে পুরাতন খোয়াই নদী, পুকুর ও জলাশয় এর গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. ফরিদুর রহমান। ধরা’র আহ্বায়ক তাহমিনা বেগম গিনির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ ও বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল। আলোচনায় অংশ নেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার সম্পাদক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, সাহিত্যিক সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহান আরা খাতুন, গবেষক ড. শেখ ফজলে এলাহী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সব মাধ্যম পুকুর, নদী, খাল জলাশয় হারিয়ে জলাবদ্ধতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পানি নিষ্কাশন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত। অথচ জলাবদ্ধতা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনও ভূমিকা নজরে পড়ছে না।