সাঁওতাল আদিবাসীদের জমিতে ইপিজেড স্থাপন না করার দাবি

গাইবান্ধায় সাঁওতাল আদিবাসীদের তিন ফসলি কৃষি জমি সুরক্ষায় সেখানে কোনও ইপিজেড স্থাপন না করার দাবি জানিয়েছেন ১৪টি ভূমি ও মানবাধিকার সংস্থা। পাশাপাশি সাঁওতাল আদিবাসীদের পূর্বপুরুষের জমি স্থায়ীভাবে বুঝিয়ে দেওয়াসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে সংস্থাগুলো। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘গাইবান্ধায় সাঁওতালদের পূর্বপুরুষের জমিতে বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং তিন ফসলি কৃষি জমি সুরক্ষার দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা। 

সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে এএলআরডি, নিজেরা করি, টিআই-বি, ব্লাস্ট, বেলা, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বারসিক, নাগরিক উদ্যোগ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, এইচডিআরসি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে কিছু আইন, নীতিমালা আছে। কিন্তু দেশের আইন-নীতিমালা যখন প্রয়োগ হয় না তখন দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ জনগণকে। আমরা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মে ইপিজেড নির্মাণের বিপরীতে স্মারকলিপি দিয়েছিলা। হুকুম-দখলে সরকারি নীতিতে আছে অধিগ্রহণকৃত জমি যদি নির্ধারিত কাজে ব্যবহৃত না হয়, তা হলে যাদের জমি তাদের ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাস্তবতা ভিন্ন। চিনি কল ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে গেলেও সেই জমি আদিবাসী সাঁওতালদের ফেরত দেওয়া হয়নি বরং ২০১৬ সালে তাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয় এবং ৩ জন আদিবাসী তৎকালীন পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনের দমন-পীড়নে নিহত হন। 

তিনি বলেন, আমরা এই পরিস্থিতিতে নতুন করে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় প্রস্তাবিত ইপিজেড নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্ত ও প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানাই। তিন ফসলি জমিতে নতুন কোনও প্রকল্প আর নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গোবিন্দগঞ্জের অধিবাসীদের মতে, এই তিন ফসলি জমিতে তিন মৌসুমের ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি অন্য শস্য চাষ করা হয়। এই ফসলি জমি অত্যন্ত উর্বর। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে, খাদ্য উৎপাদনকে প্রাধান্য দিয়ে, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে এই জমি সুরক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা তাদের ৫ দফা দাবিগুলো তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—

১। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় সরকারের যদি কোনও উন্নয়ন প্রকল্প থেকে থাকে, তা হলে সেটি বাস্তবায়নের পূর্বেই ঐ এলাকার ২০১৬ সালে  ক্ষতিগ্রস্ত এবং যে সব সাঁওতাল পরিবার পূর্বপুরুষের জমির দাবি করে আসছে, তাদের ন্যায্য দাবির স্বীকৃতি দিয়ে শান্তিপূর্ণ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।

২। ইপিজেড বা অন্যকোনও শিল্প স্থাপন করতে হলে সরকারকে বাধ্যতামূলক শর্ত অনুযায়ী যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিবেশগত ফলাফল (ইআইএ) এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব (এসআইএ) নিরূপণ করতে হবে।

৩। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রভাব শুধুমাত্র গোবিন্দগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় নয় গোটা অ্যাগ্রোইকোলোজিকাল অঞ্চলের ভূমি, পানি, পরিবেশ ও কৃষিতে দীর্ঘমেয়াদি ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব কী হতে পারে তাও নিরূপণ করতে হবে।

৪। ২০১৬ সালের শহীদ ও আহতদের পরিবার এখনও হত্যার ও নিষ্ঠুরতার বিচার পায়নি। সেইবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ সব অপরাধীর আইনানুগ সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। নিহত ও আহতদের পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 

৫। স্থানীয় প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তা সরকারের কোন ইআইএ ও এসআইএ সম্পন্ন হওয়ার আগেই এলাকায় ইপিজেড হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন এবং সাঁওতাল ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়ানো ও উত্তেজনা সৃষ্টির উৎসাহ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।