‘আদিবাসী নেই’ প্রচার করলেই সরকারের লাভ: ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে মিডিয়ার ওপর হস্তক্ষেপের একটি ক্ষমতা কাজ করে। এই দেশে ‘আদিবাসী নেই’ — এমন প্রচার আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারলেই প্রতিটি সরকারের সুবিধা হয়। আদিবাসীদের অধিকার স্বীকার না করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে এক ধরনের মৌন ঐকমত্য রয়েছে। সংবিধানেও আদিবাসীদের অধিকার খর্ব করার প্রবণতা দেখা যায়।”

শুক্রবার (২০ জুন) ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’ আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ধানমন্ডির উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) মিলনায়তনে।

তিনি আরও বলেন, ‘আদিবাসীদের আরও সংগঠিত ও সচেতন হতে হবে। তবে এটি শুধু আদিবাসীদের নিজস্ব অধিকার নয়, বরং এটি পুরো বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের অধিকার। কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা ভেঙে আবার নতুন করে সেই একই ধরনের ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘৩৩ বছর আগে লোগাং গণহত্যার প্রতিবাদে তরুণদের চোখে যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আগুন দেখেছিলাম, আজও সেই একই দ্রোহের চোখ দেখি বর্তমান আদিবাসী তরুণদের মাঝে। কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবে না হলে তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ক্ষমতাসীনরা আদৌ এ সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে দেখতে চান কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।’

আলোচনায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘রাষ্ট্র দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। যখন রাষ্ট্র এক দানবীয় রূপ নেয়, তখন নাগরিকদের আর কোথাও যাওয়ার পথ থাকে না। বাংলাদেশে আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটছে। যারা নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তাদের উচিত হবে আদিবাসীসহ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’-এর সহ-সভাপতি অজয় এম মৃ। আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)-এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, এবং চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো।