কানাডায় বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু: ৮ মাসেও খোলেনি রহস্যের জট

কানাডার সাসকাচেওয়ান অঙ্গরাজ্যের সাসকাটুন শহরে অবস্থিত ‘হেরিটেজ ইন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার’-এ কর্মরত এক বাংলাদেশি নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ এ পর্যন্ত কোনও সুস্পষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি।

২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর, সাসকাটুন শহরের উল্লিখিত হোটেলের নিচ থেকে নন্দিতা ভট্টাচার্য মুনমুন নামের ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে সাসকাটুন পুলিশ সার্ভিস। তিনি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্বাশা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এবং সাবেক কমিশনার বলাই ভট্টাচার্যের পুত্রবধূ। তার স্বামী অনুপ ভট্টাচার্য।

মুনমুন শ্রীমঙ্গলের প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড শাখায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের জুন মাসে উন্নত জীবনের আশায় পরিবারসহ কানাডায় পাড়ি জমান। সাসকাটুন শহরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই কর্মরত ছিলেন।

ঘটনার দিন অনুপ ভট্টাচার্য সকালবেলা মুনমুনকে গাড়িতে করে হোটেলে পৌঁছে দেন। বিকাল ৪টার দিকে তাকে বাসায় ফিরিয়ে নিতে হোটেলে গেলে, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর মুনমুনের মোবাইলে বারবার কল করেন। এর কিছুক্ষণ পর একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনটি দিয়ে জানান, মুনমুন আর বেঁচে নেই।

তবে ঠিক কখন, কীভাবে ছাদে উঠে নিচে পড়ে মুনমুনের মৃত্যু হয়েছে—সেটি জানাতে পারেনি পুলিশ। কোথাও কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই, সিসিটিভি ফুটেজ নেই, এমনকি তার পার্সে থাকা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডগুলোও খোয়া গেছে বলে অনুপ ভট্টাচার্য জানান।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন মুনমুন হোটেলের স্টোর রুম পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এরপর তার আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছয়তলা বিশিষ্ট হোটেলটির ছাদে গিয়ে উপর থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আইন অনুযায়ী হোটেলের ছাদে ওঠার অনুমতি নেই। পুরো হোটেল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং পলিসি রয়েছে। ছাদে ওঠার চাবি শুধু মেইনটেন্যান্স বিভাগে সংরক্ষিত থাকে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে—মুনমুন কীভাবে, কার কাছ থেকে চাবি পেলেন? তিনি একা ছাদে উঠলেন নাকি কেউ তাকে উঠতে সহায়তা করল? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। ঘটনার আট মাস পরও মুনমুনের মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য থেকেই গেছে। পরিবার এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও প্রকৃত সত্য প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন:

কানাডার হোটেলে বাংলাদেশি নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, ১৫ দিনেও মেলেনি তথ্য