এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কলম বিরতি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও প্রতিহিংসামূলক বদলি আদেশ বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের রাজস্ব ভবনে চলছে এই কর্মসূচি, তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রফতানি কার্যক্রম এ কর্মসূচির আওতামুক্ত রয়েছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে ছিল নানা প্রতিবাদী স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। এতে লেখা ছিল— ‘গোলামি আইন বাতিল কর, করতে হবে’, ‘বদলির নামে প্রহসন, মানি না, মানবো না’, ‘জুলুমবাজি বন্ধ কর’—এমন নানা বার্তা।

সোমবারও একই দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়। ওইদিন বিকালে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও সব নিপীড়নমূলক বদলি আদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। ঘোষণা অনুযায়ী, ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেশের সব কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসে কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চলবে। আর দাবি মানা না হলে ২৮ জুন থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত সব কার্যক্রমে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যানের অধীনে কোনও কার্যকর রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি সরকারের ভুল এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন এবং এনবিআর সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।’ তাদের দাবি, সরকারদলীয় আমলাদের একটি তালিকায় তিনি ৩ নম্বরে অবস্থান করছেন এবং এনবিআর বিলুপ্তির ষড়যন্ত্রেও তিনি যুক্ত।

সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, এনবিআর সংস্কার বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট চিঠি ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তারা। এতে বাধ্য হয়ে রাজস্ব ভবনের নিচতলার মেঝেতে একাধিকবার সভা আয়োজন করতে হয়েছে।

তারা আরও জানান, আগামী ৭ জুলাই এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ‘জনবান্ধব ও আধুনিক এনবিআরের’ একটি রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে। সেখানে এনবিআর আইনের সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, অটোমেশন, সেবা প্রদান, জবাবদিহি ও সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসবে।

প্রসঙ্গত, সরকার চলতি বছরের ১২ মে এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভাগ করে পৃথক দুই ইউনিট গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। এনবিআরের অধীন তিনটি বিভাগ—আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস—এর কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন। তবে সরকার পরে জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত করা হচ্ছে না; বরং একে একটি ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত বিভাগে’ রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার তদারকির জন্য ছয় সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। তবে এতে এনবিআরের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি আরও জোরালো হয় এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ২১ জুন ফের জরুরি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অসহযোগের ঘোষণা দেয়।