প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ চেয়ে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রবাসে অবস্থানরত ১৭টি দেশের ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১৭৬টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বসবাস করছে। যেহেতু বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি— যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। যেহেতু ভোটাধিকার নাগরিকের একটি রাজনৈতিক অধিকার। এটি আমাদের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। একজন নাগরিকের সাময়িক অবস্থানের পরিবর্তন সংবিধান স্বীকৃত। এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা স্টকহোম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (আইডিইএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৬টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের বিদ্যমান কাঠামোতে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে সংশোধনীর প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আউট অব-কান্ট্রি ভোটিংয়ের বিধান চালু করলেও আবেদন, ব্যালট গ্রহণ এবং ফেরত পাঠানোর জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া এটিকে বাস্তবে অসম্ভব করে তুলে। এমনকি নির্বাচন কমিশন ২০২০ সালে মালয়েশিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু করলেও তা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্থগিত হয়ে যায়। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস গ্রহণে অনীহা, জনবলের অভাব, তহবিল স্বল্পতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা সর্বোপরি অহেতুক রাজনৈতিক বিতর্ক বিদ্যমান সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকল্পে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরিভিত্তিতে গ্রহণ করার জন্য নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো—
ক. জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, এমন নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া: জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটদান নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
খ. জাতীয় পরিচয়পত্রপ্রাপ্ত সব প্রবাসীদের হালনাগাদ করা তালিকা প্রকাশ: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রপ্রাপ্ত সব প্রবাসীর সর্বশেষ অবস্থান (বসবাসকারী দেশ) উল্লেখপূর্বক নির্বাচন কমিশন একটি হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে।
গ. নির্বাচন সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন: নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনুপাতে নির্বাচন কমিশন প্রতিটি দেশে এক বা একাধিক নির্বাচন সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করবে। এসব কেন্দ্র থেকে ওই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
ঘ. ভোট কেন্দ্র স্থাপন এবং ভোট গ্রহণ: নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় নির্বাচন সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে প্রবাসীদের সরাসরি ভোটগ্রহণ করতে হবে। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা যেতে পারে। প্রবাসীদের সংখ্যা ও দূরত্ব অনুসারে নির্বাচন কমিশন এক বা একাধিক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবে। ভোটদানের গোপনীয়তা রক্ষা করে কমিশন ভোট কার্যক্রমের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করবে।
ঙ. ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা: ভিডিও রেকর্ডিং সহকারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রবাসীদের দেওয়া ভোট গণনা এবং ফলাফল প্রকাশ করবে। নির্বাচনের ফলাফল একাধিক নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে (ইমেইল, নিবন্ধিত ডাক ইত্যাদি) নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাবে।
চ. গণনা করা ভোট, ফলাফল এবং ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়ার ধারণ করা ভিডিও নির্বাচন কমিশনে দ্রুততম সময়ে পাঠানো: ভোট কার্যক্রম সমাপ্তিঅন্তে গণনা করা ভোট, ঘোষিত ফলাফল ও ভোটপ্রদান প্রক্রিয়ার ধারণ করা ভিডিও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বরাবর পাঠানো নিশ্চিত করবে।
তাই আইনি নোটিশপ্রাপ্তির পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে কার্যকর এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায়, নোটিশপ্রেরকরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এবং যথাযথ প্রতিকার পাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।