পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে ভুক্তভোগীর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানার ইঙ্গিত, ফেসবুকে সয়লাব 

কুমিল্লার মুরাদনগরে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আইন বলছে, ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের নাম পরিচয় গোপন রাখতে হবে। তবে খোদ আইন শৃঙ্ক্ষলারক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেই সেই আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে আসামিদের গ্রেফতারের প্রেচেষ্টা অব্যাহত’ শিরোনামে কুমিল্লা পুলিশ সুপারের দেওয়া একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব‍্যক্তিরাও। সেই বিজ্ঞপ্তিতেই ধর্ষণের শিকার নারীর পরিচয়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবারের (২৬ জুন) ওই ঘটনার সময় উল্লেখ করে অভিযুক্তের গ্রামের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগী ওই নারীকেও ‘একই গ্রামের’ এক প্রবাসীর স্ত্রী বলে পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এভাবে অভিযুক্তের ঠিকানা দিয়ে একই গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী বললে পরিচয় কী আর গোপন থাকে, প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১৪ (১) ধারা বলছে, ‘এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তত্সম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা ছবি বা অন্যবিধ তথ্য কোনও সংবাদপত্রে বা অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমে (অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাইবে যাহাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়। এর বিধান লংঘন করা হইলে উক্ত লংঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের প্রত্যেককে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী দিলরুবা শরমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনোভাবেই ধর্ষণের শিকার নারীর পরিচয় উন্মোচন করার কোনও এখতিয়ার কারোর নেই। যিনি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন তিনি চাকরিবিধি লংঘন করেছেন। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট আদেশ আছে কোনও অবস্থাতেই ভিকটিমের নাম পরিচয় ছবি বা কোনও কিছুই প্রকাশ করা যাবে না। এর ফলে ভিক্টিম এবং তার পরিবার একটা ভয়-ভীতি, হুমকি এবং জীবননাশের আশঙ্কার ভেতরেও পড়ে গেলো।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। এরপর থেকেই ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি তাকে বিরক্ত করছিল। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে ফজর আলী কৌশলে ঘরে ঢুকে গলায় ছুরি ধরে তাকে ধর্ষণ করে এবং কাউকে জানালে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার সময় এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হলেও অভিযুক্ত ফজর আলী পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন ব্যক্তি ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি জানার পর মুরাদনগর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এদিকে আজ রবিবার (২৯ জুন) সকালে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফজর আলী ছাড়াও এখন পর্যন্ত আরও চার জনকে আটক করা হয়েছে। যারা ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও করে নারীর শ্লীলতাহানি করছিলেন।

আটককৃতরা হলেন, মুরাদনগর উপজেলার পাঁচকিত্তা বাহেরচর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে মো. আরিফ ও মো. তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক।