ফ্রান্সের নিস শহরে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে দেশের উপকূলীয় দুর্যোগ, সমুদ্রদূষণ ও ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে এই সম্মেলনে অংশ নেন দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের ভাষ্য, বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ব্লু ইকোনমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাময় খাত হলেও তা বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট ও সমুদ্রদূষণের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) তৃতীয়বারের মতো জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন-২০২৫ শুরু হয়েছে। ফ্রান্স ও কোস্টারিকার যৌথ আয়োজনে এবারের সমুদ্র সম্মেলন চলছে ফ্রান্সের নিস শহরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানসহ সরকারি প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংগঠন এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। বরাবরের মতো বাংলাদেশও এবার সমুদ্র সম্পদ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।
প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো– সাগরের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সামুদ্রিক বিজ্ঞান, তথ্য আদান-প্রদান ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে উন্নত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কার্যকর সমুদ্রভিত্তিক সমাধানের জন্য অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ধারাবাহিক সক্ষমতা ও জ্ঞানের ঘাটতির সম্মুখীন, তা দূর করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’র ধারা ১৪-এর অর্থবহ বাস্তবায়ন ও সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকারের জন্য জরুরি বিনিয়োগ আহ্বান করছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হাসান উচ্চপর্যায়ের এক সেশনে বলেন, “২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত ও ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুমোদিত ‘জাতীয় আইনগত এখতিয়ারের বাইরের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তি’ অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে আমরা জাতীয় সীমার বাইরে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশ এই চুক্তির অনুমোদন ও এর দায়বদ্ধতা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব যোগ করেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই চুক্তি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি ১৪-এর বৃহত্তর লক্ষ্যগুলোকে সম্পূরক করবে।’
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা রয়েছে। এজন্য সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সমুদ্রকে দূষণমূক্ত রাখা অপরিহার্য। সমুদ্র সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুটি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো– বাংলাদেশ তার এখতিয়ারের আওতাভুক্ত অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশ ব্যবস্থা চিহ্নিত করে সেগুলোর কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এছাড়া বিবিএনজে চুক্তি অনুমোদনের পর বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নের প্রস্তুতি জোরদার করবে ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক চুক্তির ব্যাপক অনুমোদন উৎসাহিত করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় সমুদ্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা বিষয়ক প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।