ফ্রান্সের নিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে সমুদ্র রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপের জন্য ১৭০টিরও বেশি দেশ ‘আমাদের সমুদ্র, আমাদের ভবিষ্যৎ: জরুরি পদক্ষেপের জন্য ঐক্যবদ্ধ’ শীর্ষক রাজনৈতিক ঘোষণা গ্রহণ করেছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক পরিবহন থেকে কার্বন নির্গমন কমানো, সামুদ্রিক দূষণ রোধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য অর্থায়ন জোরদার করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এই ঘোষণা এবং রাষ্ট্র ও বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছামূলক প্রতিশ্রুতিগুলো মিলে ‘নিস ওশান অ্যাকশন প্ল্যান’ গঠন করেছে, যা পরিবেশ রক্ষায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন গতি দিচ্ছে। একই সঙ্গে সম্মলেন থেকে দশ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি এসেছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল লি জুনহুয়া বলেন, ‘এই সপ্তাহে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। কপ৩০ এবং জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই গতি ধরে রাখতে হবে।’
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য মতে, সমুদ্র রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে যে তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি এসেছে, তার মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের ১ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ সমুদ্র সংরক্ষণ, বিজ্ঞান ও টেকসই মাছ ধরার জন্য। ফরাসি পলিনেশিয়ার প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা তৈরি করা হবে, যার আয়তন হবে প্রায় ৫০ লাখ বর্গকিলোমিটার। নিউজিল্যান্ডের ৫২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হবে প্যাসিফিক অঞ্চলে সমুদ্র প্রশাসন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। জার্মানির ১০০ মিলিয়ন ইউরোর কর্মসূচি বল্টিক এবং উত্তর সাগরে যুদ্ধের সময়ের অবশিষ্ট গোলাবারুদ অপসারণে। ইন্দোনেশিয়া, বিশ্বব্যাংক এবং অংশীদারদের 'কোরাল বন্ড' চালু করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যা ব্যক্তিখাতের অর্থায়নকেসুরক্ষায় ব্যবহৃত হবে। পানামা ও কানাডার নেতৃত্বে ৩৭টি দেশের 'হাই অ্যাম্বিশন কোয়ালিশন ফর আ কোয়ায়েট ওশান' গঠন করা হবে।ইতালির ৬.৫ মিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি তেল প্ল্যাটফর্ম এবং সংরক্ষিত এলাকায় নজরদারির জন্য। কানাডার ৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতা বৃদ্ধিতে। স্পেনের প্রতিশ্রুতি নতুন ৫টি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলা, যা তাদের সামুদ্রিক এলাকার ২৫% সংরক্ষিত করবে।
বিবিএনজে চুক্তিতে অগ্রগতি
এবারের সম্মেলনের ফাঁকে ১৯টি দেশ বিবিএনজে চুক্তি অনুমোদন এবং ২০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনুমোদন করেছে, ১০টি অনুমোদন বাকি রয়েছে চুক্তি কার্যকরের জন্য। বিবিএনজে চুক্তি সমুদ্রের এমন অংশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা কোনো দেশের অধীনে নয়। অর্থাৎ জাতীয় সীমার বাইরের সমুদ্র রক্ষা করাই হবে এই চুক্তির প্রধানতম কাজ।
গত ৯ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ৫৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, ১৫ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী এবং ৪৫০টির বেশি সাইড ইভেন্টের মাধ্যমে সমুদ্র সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারে পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানানো হয়। চতুর্থ জাতিসংঘ সমুদ্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৮ সালে। চিলি ও দক্ষিণ কোরিয়া পরবর্তী এই সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করবে।