২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কে এম নূরুল হুদা। ওই নির্বাচনের পর তার বিরুদ্ধে দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগ এসেছিল। এবার সেই কথা স্বীকার করেছেন নূরুল হুদা। একই সঙ্গে নিজের অপারগতার কথাও জানিয়েছেন।
বুধবার (২ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, গতকাল (১ জুলাই) নূরুল হুদা প্রহসনের নির্বাচন ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় আদালতে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করি। পরে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা জবানবন্দি চলে। জবানবন্দিতে তিনি সেই নির্বাচনে কারসাজির সব কথাই স্বীকার করেছেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের চাপের মুখে ২০১৮ সালে প্রহসনের নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছেন। সে সময় সরকার দলের নেতাকর্মী, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা মিলে দিনের ভোট রাতেই করে ফেলেন। বিষয়টি যখন জানতে পারি, তখনই সব শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় পার হওয়ার পর জানতে পারি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তখন আমি বুঝতে পারি দিনের ভোট রাতেই হয়েছে। আমাদের অন্ধকারে রেখে এমন অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোটে অনিয়ম করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি অনুতপ্ত ছিলাম। যেহেতু গেজেট প্রকাশ হয়ে গেছে, তখন আমি নির্বাচন বাতিল করতে পারি না। তখন আমার হাতে ক্ষমতাও নেই।
নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনারকে অন্ধকারে রেখে পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। আর গোয়েন্দা সংস্থা আগেই ফিল্ড দখল করে দিনের ভোট রাতে করতে সহযোগিতা করেছে। নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীনের অধীনে ছিলেন। তিনি তৎকালীন সরকারের হয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। আমার একার পক্ষে কিছুই করার ছিল না।
এর আগে গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে ‘স্থানীয় জনতা’ তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। চার দিনের রিমান্ড শেষে আরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত ১ জুলাই এ মামলায় নূরুল হুদা দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেফতার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়।