ফিরে দেখা: ১০ জুলাই ২০২৪

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পালাবদলের মুহূর্ত ২০২৪ সালের জুলাই। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসের দিনগুলো ফিরে দেখতে বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রয়াস।

আজ ১০ জুলাই। ২০২৪ সালের এই দিনে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। তবে আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এদিন দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ লিখিত এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা কোনও ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত মানছি না। আমাদের এক দফা দাবি, সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) কোটা রেখে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে।’

এদিন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সকালে প্রথমে রাজধানীর শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাব মোড় ব্লক করেন। পরে একে একে কাঁটাবন, নীলক্ষেত, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, বিজয়সরণি, মহাখালী, চানখারপুল, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, মৎস্য ভবন, জিপিও, গুলিস্তান, রামপুরা ব্রিজ, আগারগাঁও, হাতিরঝিলের মোড়ে ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ ২০টির বেশির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ‘ব্লকেড’ তৈরি করেন তারা। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভার ও মগবাজার-সাতরাস্তা ফ্লাইওভারও ব্লক করে দেন আন্দোলনকারীরা।

এছাড়াও মহাখালী ও কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ে কাঠের গুঁড়ি ফেলে রেলপথ ব্লকেড করেছেন তারা। এতে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এদিন তৃতীয় দিনের মতো পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। এর আগে ৮ ও ৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫-৬ ঘণ্টা করে বাংলা ব্লকেড পালন করা হয়।

এদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে কর্মসূচি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ২০১৮ সালে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা কোটাহীন মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র অর্জন করেছি। কিন্তু গত ৫ জুন আমাদের সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তারপর থেকে আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছি। আমাদের কর্মসূচিকে অনেকে জনদুর্ভোগের কারণ বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন সবার অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে আসিফ বলেন, আগামীকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। সারা দেশে সড়ক ও রেলপথে আমাদের শিক্ষার্থীরা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হবেন এবং সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ ব্লক করবেন।

একই সময় আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আদালতের রায় আমাদের বলছে চার সপ্তাহ পরিপত্র বহাল থাকবে। তারা এটিও বলছে চার সপ্তাহ পরে আরেকটি শুনানি হতে পারে। সেখানে সরকারের পরিপত্রটি বহাল রাখতে পারে, আবার অবৈধও ঘোষণা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশ হয়নি। সেখানে ২০১৮ সালের পরিপত্রটি বহাল রাখতে পারে বা সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। আবার বলা হচ্ছে যদি কোটা প্রথা বাতিল করা হয়, সেখানে আমাদের কথা হচ্ছে আমরা বাতিল নয়, সংস্কার চাই। আমাদের দাবি কিন্তু কোটা বাতিল নয়, সব সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের করা রিটের কারণে পরিপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। যদি আবারও কারও রিটের পর আবারও সেটি অবৈধ করা হয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়? জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর জারি করা পরিপত্র ছয় বছর পর অবৈধ ঘোষণা করা হয়, তাহলে আমাদের ভরসার জায়গা আসলে কোথায়? আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। তারা যদি আমাদের লিখিত দেয় যে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনাদের সঙ্গে রাজপথে আর আমাদের দেখা হবে না।