মব সন্ত্রাস নিরসন ও প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতিতে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের একাংশ। ওই বিবৃতিতে সই করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক।
বুধবার (৯ জুলাই) তারা এই বিবৃতি দেন। বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আযীম।
উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, অনেক মিডিয়া এখানে লিখছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের বিবৃতি। কিন্তু আমরা অনেকেই এখানে সাধারণ শিক্ষক হিসেবে বিবৃতিতে সই করেছি। বিবৃতিটা তো কোনও দলের ব্যানারে যায়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মব সন্ত্রাসের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এতে শুধু মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি কেউ কেউ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন, নারীরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, এমনকি শিশুদের ভবিষ্যৎও বিপর্যস্ত হয়েছে।
মুক্তবুদ্ধি চর্চার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের এসব ঘটনায় তারা ‘খুবই উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত’ বলে জানান।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, গণমাধ্যম, ব্যবসাকেন্দ্র, আবাসিক ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপনা, এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত মব সন্ত্রাসের কালো থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত খবর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বরং, কোনও কোনও দায়িত্বশীল মহল ‘মব’কে ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করায় মব সন্ত্রাস একটি সাংস্কৃতিক রূপ নিচ্ছে। এতে মব সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই তার বিচার হওয়া উচিত। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দেশকে ‘মবের মুল্লুক’ বানানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ, সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন এবং অবিলম্বে মব সন্ত্রাস নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নিন।
বিবৃতিতে যারা সই করেছেন, তারা হলেন— অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম (রফিক শাহরিয়ার), অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ, অধ্যাপক ড. জামিলা এ চৌধুরী, শবনম আযীম, অধ্যাপক ড. আবু সারা শামসুর রউফ, অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল, অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত, অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার, অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম, অধ্যাপক ড. সঞ্চিতা গুহ, অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আক্তার, অধ্যাপক ড. জাভীদ ইকবাল বাঙালি, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, অধ্যাপক ড. বিল্লাল হোসেন, অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমল হোসেন ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির, অধ্যাপক ড. মামুন আল মোস্তফা, অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. সুব্রত সাহা, ড. নীলিমা আকতার, অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা, অধ্যাপক আবু হোসেন মুহাম্মদ আহসান, অধ্যাপক ড. জি এম গোলজার হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. রাফিউল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ড. এটিএম সামছুজ্জোহা, অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক ড. একেএম খাদেমুল হক, ড. কায়সার আহমেদ রকী, ড. নাইমা নিগার, সামশাদ নওরীন, ড. এম এল পলাশ, ড. মুহাম্মদ মাইনউদ্দিন মোল্লা, মো. রাকিবুল হাসান, ড. ইসরাত জাহান, ড. মো. হাসান ফারুক, ড. মো. নাসির উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, মো. কামরুল হাসান, ড. সিদ্ধার্থ দে, মাহমুদুর রহমান, ড. মো. মাহফুজুর রহমান খান, ড. মো. রায়হান সরকার, তৌহিদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ ইউসুফ, ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ, ড. মো. জহিরুল ইসলাম, মো. ইব্রাহীম মিয়া, ড. আরশাদুল হাসান, ড. মো. বেলাল হোসেন, ড. আব্দুল কাদের মহিউদ্দিন, ড. মির শরিফুল ইসলাম, আহমাদ হাসান চৌধুরী, ড. মোহাইমিনুল আদীব, মো. ইমরান হোসেন, মোহাম্মদ সোহেল রানা, মো. নাইমুল ইসলাম, ড. মো. মতিয়ার রহমান, মাহমুদুল হাসান ও অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান।