লেজুড়বৃত্তির কারণে ইসলামি দলগুলোতে ঐক্য নেই: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীমলেজুড়বৃত্তির কারণে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। দেশের জাতীয় ইস্যুতে তৎপর না থাকলে জনগণ ধর্মভিত্তিক এসব দলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলেও মনে করেন তিনি। অন্যদিকে যারা নৈতিকতাবিরোধী তারাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন বলেও অভিমত তার। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন চরমোনাই পীর।

বাংলা ট্রিবিউন: ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই কেন?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে ইসলামি দলগুলোকে বোঝায়। কিন্তু ইসলামি দলগুলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্যকোনও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত। লেজুড়বৃত্তি করলে হয়তো নিজের দলই শক্তিশালী হবে,ঐক্য হবে কিভাবে? লেজুড়বৃত্তি করা এসব দলের জন্য ঐক্যের চেষ্টা চালালেও তা বাধাগ্রস্ত হয়। ইসলামী দলগুলো লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে কোরআনের আইন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলেই কেবল ঐক্য সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর জনদাবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম কেন?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য আমাদের দেশের অনেক ইসলামি দল জনদাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সাধারণ মানুষের দাবির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। কোনও দল যদি দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা না বলে, তবে তারা কোনওভাবেই জনসম্পৃক্ত হতে পারবে না। আজকে ইসলামী আন্দোলন সারাদেশে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা জনগণের দাবি নিয়ে কথা বলেছি। সভা-সেমিনার, মিছিল, লংমার্চ, রোড মার্চ করছি। ইসলামি দলগুলোকে জনগণের রায় পেতে হলে তাদের ভাষা বুঝে কাজ করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সম্প্রতি হয়ে যাওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ বলছেন আপনারা,কিন্তু কেন?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম,সরকারি দলের ভোট ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচনী উৎসবের পরিবর্তে তাণ্ডবের নির্বাচনের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ক্ষমা পাবে না। আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, বর্তমান স্টাইলের নির্বাচনের চেয়ে চেয়ারম্যানদের তালিকা গণভবনে তৈরি করে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দিলেই ভালো হবে। এতে জনগণের সম্পদ বাঁচবে। মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। তামাশার নির্বাচন বন্ধ করে জনগণকে নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে। তৃতীয় দফায় যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠছে, এটি কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষেরাই কেবল ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন। এ দাবি সাধারণ মানুষের নয়। ধর্ম মানেই নৈতিক মূল্যবোধ। যারা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা চান না,তারা এসব দাবি নানা সময়ে তুলে ধরেছেন,কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ এসব অনৈতিক লোকদের দাবি মেনে নেবেন না।

বাংলা ট্রিবিউন: কওমি মাদ্রাসার পাঠ্য বই, সিলেবাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আপনি কি মনে করেন সিলেবাসের আধুনিকায়ন প্রয়োজন ?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: পাঠ্য বই বা সিলেবাসের মানোন্নয়ন হওয়া দরকার। তবে এটা চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে কওমি বোর্ড সিলেবাসে বাংলা, ইংরেজিসহ অনেক বিষয় সংযুক্ত করেছে। প্রয়োজন হলেও ভবিষ্যতে আরও পরিবর্তন হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে বিরোধ কেন ?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে সরকার ওলামাদের ধোঁকা দিচ্ছে। ইচ্ছা থাকলে সরকার এতোদিনে স্বীকৃতি দিয়ে দিতে পারতো। কওমি শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি দিলে তো বিরোধের কিছু নেই। সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে তো জনগণ বিরোধিতা করছে, সেটা তো সরকার মানে না। মূলকথা সরকার চাইলেই সকল সমস্যা সমাধান করে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: জঙ্গিবাদ রোধে ইসলামি দলগুলোর সোচ্চার হওয়া কি উচিত বলে মনে করেন ?

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: জঙ্গিবাদ নিয়ে নানা কথা আছে। জঙ্গিবাদ নামে বলা হলেও এটা তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সরকার একবার বলে দেশে জঙ্গি নেই, একবার বলে আছে। সরকারকে আগে এ বিষয়ে পরিস্কার হতে হবে। আর ধর্ম কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না।ফলে যারা ধর্মের কথা বলে এসব করছে তাদের মূল উদ্দেশ্য ধর্মের বিস্তার নয়,ধর্মকে বির্তকিত করা। যারা মানবতাবিরোধী তারাই মানব হত্যা করছে,সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে। আলেমদের উচিত বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পরিস্কার করা। যারা সন্ত্রাসী, তাদের পরিচয় শুধুই সন্ত্রাসী, তাদের কোনও ধর্ম নেই।

/সিএ /এমএসএম/আপ- এপিএইচ/