‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি বৃহৎ প্রয়াস’

খন্দকার রউফএবিএম রফিকুল ইসলাম, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা এক সাহসী সৈনিক। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি দেশের সার্বভৌম রক্ষায় লড়াই করেছিলেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পেরে যিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন।

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (সাটিফিকেট নং -ম-১০৩৮৪২) স্থানীয়দের কাছে একজন নাট্যকার, কথা সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক হিসেবে পরিচিত। এই মুক্তিযোদ্ধা রণাঙ্গনের স্মৃতির টানে এখনও মাঝেমধ্যে ঘুরতে যান ভরতের সেইসব অঞ্চলে, যেসব এলাকায় ১৯৭১ সালে ছুটে বেড়িয়েছেন। রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ সদর উপজেলার পৌর এলাকার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমান্ডারের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৭১ সালের জুনের শেষ অথবা জুলাইয়ের প্রথম দিকে ভারতের বালুর ঘাট বাঙ্গালীপুরে ট্রেনিং করেন রফিকুল ইসলাম। এরপর সহযোগীদের সঙ্গে চলে যান পশ্চিমবঙ্গের পতিরামে। সেখানে ২১ দিনে অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসেন দেশে। দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে ৭নং সেক্টরে মেজর নজমুল হক এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নূরুজাম্মান এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা এবং সব ধরনের অত্যাচার, নির্যাতনের এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।’

সম্মুখ যুদ্ধের সময় চোখের সামনে তার বন্ধু দরিস উদ্দিনকে মারা যেতে দেখেছেন। বেশ ক’বার প্রাণে বেঁচে গেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা থেকে।

‘৭১ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের আগে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক জালাল চৌধুরীর নেতৃত্বে রফিকুল ইসলাম নওগাঁর তৎকালীন কালেক্টরেট আক্রমণ করেন। জগৎসিংহপুর গ্রামে অবস্থান নেন তারা। মাঝখানে শাখা যমুনা নদী রেখে এক পাশে অবস্থান নিয়ে তাক করেন পাকিস্তানি বাহীনিকে। সকাল থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত চলে সম্মুখ যুদ্ধ। এ লড়াইয়ে ৮ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হোন।

দেশ স্বাধীনের ৪৪ বছর পরও দেশের তথা দেশের মানুষের মঙ্গলে নিজেকে বিভিন্নভাবে নিয়োজিত রেখেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি কখনও নাট্যমঞ্চে, কখনও লেখনিতে তুলে ধরেছেন সমাজের অন্যায়-অবিচার।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার দেখে যেতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন তিনি। তবে বিচার আরও আগে শুরু হওয়া উচিত ছিলো উল্লেখ করে বলেন, ‘দেরিতে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে এটি জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার একটি বৃহৎ প্রয়াস।’

এ মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং তার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধ করেছি তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনতা অর্জন করা। দেশ স্বাধীনের পর আমরা শোষণ, নির্যাতন, দুর্নীতি ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে আমরা তেমনটি দেখতে পাই না।’

/এসটি/