‘ত্রাণ কোথায় পাওয়া যায়?’

 

খাবারের অপেক্ষায় দুস্থ মানুষদের অপেক্ষা (ছবি সাজ্জাদ হোসেন)

৭ বছরের বাচ্চাসহ রমিসার (ছদ্মনাম) পরিবারের পাঁচ সদস্য সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়েছে। রমিসা বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। পুরা মাসের বেতন না দিয়ে ‘আর আসা লাগবে না’ বলে আধা মাসেই তাকে বিদায় করে দিয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে আবার কাজে যোগ দেবেন তিনি।  রমিসার সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা মা আর সন্তান। স্বামী দিনমজুরের কাজ করতেন। দুই মাস হলো জন্ডিসের কারণে কাজ করতে পারছেন না তিনি।

পীরেরবাগ নিবাসী এই পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক রমিসার বাবার (৬৫) সঙ্গে কথা হয় বেলা বারোটায় রোকেয়া স্মরণিতে। ফুটপাতে তিন চারজন বসা। ‘বাইরে বের হওয়া নিষেধ, কী করছেন এখানে’— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৩ দিন ধরে একবেলা খেয়ে আছি। আজ রাতে ভাতের ব্যবস্থা আছে। কাল থেকে নাই। আসছি যদি কোনও ত্রাণের বস্তা পাই।’ তিনিই জানান কিভাবে তারা সপরিবারের ত্রাণের জন্য ছুটছেন। ত্রাণের গাড়ি কোন দিক দিয়ে আসবে তা তো জানেন না। তাই রোকেয়া স্মরণির বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে একজন করে আছে। রাস্তায় দেখে কেউ যদি কিছু দেয়। সে আশায় অপেক্ষায় থাকেন তারা।

ত্রাণের অপেক্ষায় বস্তিবাসী (ছবি সাজ্জাদ হোসেন)

ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় আজও বসে থাকতে দেখা গেছে বৃদ্ধা নারীদের। ইকবাল রোডের মাথায় বসে ছিলেন দুই নারী। ছবি তুলতে গেলে তারা প্রথমে ভয় পান। পরে বলেন, ‘ ছবি তোলা যাবে না।’  কেন এইসময় বাইরে জানতে এগিয়ে গেলে বলেন, ‘টাকা দিবেন কথা বললে?’ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ‘সকালে খেয়েছেন কিনা’ জানতে চাইলে ওই নারী বলেন,  ‘কাল ওইদিকটায় (আড়ং সিগন্যালের দিকে দেখিয়ে) বসে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। ভাত আলু দিয়েছিল একজন। বাসায় নিয়ে গেছি। আজকে এখনও কেউ কিছু দেয়নি। বসে আছি। সকালে পানি ভাত খেয়েছি। সারাদিনে কিছু একটা পেয়ে যাব। মেয়েটা গেছে লুকিয়ে ইট ভাঙার কাজ করতে। সেও কিছু যদি টাকা পায় কাল বের হব না।’

ত্রাণ খুঁজছেন বস্তিবাসী (ছবি সাজ্জাদ হোসেন)

এলাকায় ত্রাণ দেয় না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাইনা তো। ওরা বলে, আমার কার্ড এখানকার না তাই আমারে ত্রাণ দিবে না।’ কে বলল— চাইলে বলেন, ‘ওরা’ । এরপর একটা গাড়ি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বৃদ্ধা হাত এগিয়ে ধরেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকবেন জানিয়ে বলেন, ‘আপনি যান নাহলে এখানে আর কেউ দাঁড়াবে না।’

ত্রাণ খুঁজছেন বস্তিবাসী (ছবি সাজ্জাদ হোসেন)