করোনাকালেও মহল্লার চায়ের দোকানে বসছে আড্ডা

1

রাজধানীর পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে চুপিসারে জমে উঠেছে আড্ডা। ছোট ছোট দোকানে ৫-৬ জন একসঙ্গে বসে চা পান করছেন আর কথা হচ্ছে মহামারি করোনা নিয়েই। নানা জন, নানা মত দিচ্ছেন। অথচ করোনা প্রতিরোধে সরকার যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছে, সেটাই মানছেন না তারা। ছবি তুলতে গেলেই নামিয়ে দিচ্ছে দোকানের শাটার। চা পান করতে আসা সাধারণ মানুষরা বলছেন, ‘আমরা তো বেশি সময়ের জন্য আসিনি, শুধু এক কাপ চা খেতে এসেছি। চা শেষ করে আবার চলে যাবো। এতে তেমন কিছু হবে না।’ আর দোকানিরা বলছে, ‘আমরা দুইটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। পুলিশ আসলে আবার বন্ধ করে দেই।’ এভাবেই চোর-পুলিশ খেলার মতো করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলো চলছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো সচেতনতার অভাব ছাড়া কিছুই নয়।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদ, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, জিগাতলা, এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে দেখা যায়, মহল্লার গলির ভেতরের চায়ের দোকানগুলো খোলা। সেখানে বসে চায়ের কাপ হাতে আড্ডা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু তা-ই নয়, উঠতি বয়সী যুবকদের দেখা গেছে গলির ভেতরে। তারা আড্ডা দিচ্ছে, আবার কখনও একসঙ্গে ঝাঁকবেঁধে ঝাল মুড়ির দোকানে ভিড় করছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানগুলোও শহরে চুপিসারে ঘুরছে।

জাফরাবাদে কথা হয় চায়ের দোকানি আলতাফের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গলির ভেতরের দোকান, সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখি। তেমন কোনও ঝামেলা হয় না। এর মাঝে যদি পুলিশ আসে, তখন খবর পেয়ে দোকান বন্ধ রাখি।’ হাজারীবাগে কথা হয় দোকানি আশরাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দোকান চালু না রেখে আর কী করবো বলেন। জীবনের তাগিদেই দোকান খুলতে হয়, না হলে না খেয়ে মরতে হবে। টুকটাক যা বেচাকেনা হয় তা দিয়ে বাজার করে আবার বাসায় চলে যাই।’ দোকানে চা পান করতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষরা করোনাভাইরাসকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, ‘সারা দিন ঘরে থেকে ভালো লাগে না, চা খেয়েই চলে যাবো।’

2

দোকানে চা পানরত অবস্থায় কথা হয় মুসলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারা দিন বাসায় থেকে আর ভালো লাগে না। তাই একটু চা খেতে এসেছি। চা খেয়েই চলে যাবো। এই সময়ে করোনা ধরবে না। আমরা তো বাইরে কোথাও যাই না।’

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যত বেশি দোকান খোলা থাকবে, তত বেশি করোনার ঝুঁকি বাড়বে। এই মুহূর্তে প্রশাসনের সচেতনতা তৈরি করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। কারণ, এরকম বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে যদি চা খাওয়ার জন্য বাইরে যেতে হয়, তাহলে আমি মনে করবো সচেতনতার অভাবটাই বেশি। যেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে চা খাওয়াটা তো জীবনের জন্য জরুরি না। প্রশাসন মানুষদের সচেতন করছে, প্রয়োজনে জরিমানা পর্যন্ত করছে। তারপরও যদি মানুষ অসচেতন হয়, তাহলে আর কী করবে তারা।’ 

3