X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?

কবির হোসেন
০৮ মে ২০২৪, ২১:০৭আপডেট : ০৮ মে ২০২৪, ২২:৩৩

ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়। ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীদের হাঁটাচলা করতে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনই সড়কে যানবাহন চলাচলেও তৈরি হয় ধীরগতি। সড়ক ঘেঁষে ফুটপাতের ওপর অবৈধ স্থাপনা যেমন তৈরি হয়, একইভাবে যেখানে-সেখানে রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্ক করেও রাখা হয়। এসব কারণে রাস্তায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।

এসব সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ‘স্পট বাই স্পট’ সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে রাজধানীজুড়ে চলছে ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান। ইতোমধ্যে রাজধানীর কিছু অংশে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। তবে এসব ফুটপাত কতদিন দখলমুক্ত থাকবে, কতদিনই বা অভিযান চলবে, আদৌ সব ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাবে কিনা তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

সম্প্রতি রাজধানীর ফুটপাত অবৈধভাবে দখল ও বিক্রি করার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা একটি রিট মামলার শুনানিতে গত ২৯ এপ্রিল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে ফুটপাত বিক্রি ও অবৈধ দখলকারীদের সঙ্গে কারা জড়িত তা আগামী ১৩ মে’র মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানানোর জন্য বলেছে আদালত।

ডিএমপির ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান (ছবি: সংগৃহীত)

এছাড়া আদালত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি), ঢাকার উত্তর-দক্ষিণের দুই যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ও রাজধানীর ১৫টি থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

এরপরই নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন স্পষ্ট শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আসছে। তবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করে চলে যাওয়ার পর আবারও একইস্থানে বসে দখলদাররা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, যতদিন পর্যন্ত অবৈধভাবে দখল করা ফুটপাত দখলমুক্ত না হবে, ততদিন তাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মঙ্গলবার (৭ মে)  রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে অভিযান চালিয়ে ২০০ মিটার রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করেছে ডিএমপির ট্রাফিক-মতিঝিল বিভাগ। রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিলের বক্স কালভার্ট রোডে ইডেন মসজিদের পাশের গলিতে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, আকিজ মটরস, আনার ক্রোকারির সামনের প্রায় ২০০ মিটার রাস্তার একাংশ দীর্ঘদিন যাবৎ ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে  দখল করা ছিল। মঙ্গলবার ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগের যৌথ অভিযানে সেই রাস্তা সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করা হয়েছে।

ডিএমপির ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান (ছবি: সংগৃহীত)

এর আগে মতিঝিল-ট্রাফিক বিভাগের গুলিস্তানকেন্দ্রিক রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ, কমলাপুর রেলস্টেশনের রাস্তার ওপর আইসিডি কনটেইনার অপসারণ করে।

মহাখালী বাস টার্মিনালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস, অবৈধ পার্কিং, টার্মিনালের ইনগেট ও আউটগেটে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, টার্মিনালের সামনে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ন সব মিলিয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল পার হওয়া ছিল নগরবাসীর কাছে এক ভোগান্তির নাম। সম্প্রতি ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারণে সেই চিরচেনা যানজটের এখন রূপ পাল্টেছে। সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা, কিছু কিছু জায়গায় স্বস্তিতে যাতায়াত করছেন নগরবাসী।

বুধবার (৮ মে) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এখন যেখানে সেখানে বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ হয়েছে। যানচলাচলের শৃঙ্খলার স্বার্থে মহাখালীর সামনের সড়ক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে গুলশান-ট্রাফিক বিভাগের ডিসির নির্দেশে মহাখালীতে নতুন করে ইনকামিং সড়কে একটি বাস বে চালু করা হয়েছে। ‘বাস বে’ ছাড়া দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কোনও যাত্রীবাহী বাসকে। বিশৃঙ্খলা করলেই বাস থামিয়ে সাবধান করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। নিয়ম না মানলে দেওয়া হচ্ছে মামলা।

রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে (ছবি: সংগৃহীত)

ট্রাফিক-গুলশান দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ. এস. এম হাফিজুর রহমান জানান, মহাখালীকেন্দ্রিক যানজট নিরসনে গত ৬ মে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ট্রাফিক-গুলশান বিভাগ একটি বৈঠক করে। সেখানে টার্মিনালের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস, রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং, টার্মিনালের ইনগেট ও আউটগেটে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, টার্মিনালের সামনে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ন, সীমিত এলাকায় অতিরিক্ত তেল ও গ্যাসের পাম্প, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মহাখালীতে নামার র‌্যাম্প স্থাপন, এলাকাগত সীমা নির্ধারণ ও সমন্বয়ের অভাবসহ বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয় এবং এসব সমস্যা সমাধানে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে কঠোর অভিযানে নামে ডিএমপির ট্রাফিক-গুলশান বিভাগ। তাদের সঙ্গে রয়েছেন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের স্বেচ্ছাসেবকরাও। তারা টার্মিনালের সামনে এসে থামানো বাসগুলো অনত্র সরে যেতে সহায়তা করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার ( ক্রাইম) ও অতিরিক্ত ডিআইজি লিটন কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য বর্তমানে যে অভিযান চলছে, সেটি একটি সাসটেইনবল (টেকসই) অভিযান। এটি যেন সাসটেইন করে সেদিকে খেয়াল রেখে অভিযান চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষদের যেন ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে,  চলাফেরা করতে কোনও অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেটি সহজ করতেই আমাদের এই অভিযান। চলাফেরার পথটুকু বিভিন্নভাবে দখলে চলে গেছে। সেগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্যই কাজ করা হচ্ছে। যেহেটুকুই আমরা করি না কেন, পরিবর্তী সময়ে যেন আর দখল না করতে পারে, এগুলো আমলে নিয়েই অভিযান চালানো হচ্ছে।

রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ (ছবি: সংগৃহীত)

তিনি বলেন, মানবিক দিকটাও খেয়াল করতে হবে। কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সাধারণ মানুষ যেন চলতে পারে সেভাবে কাজটি করা হচ্ছে। আমাদের ক্রাইম টিম, ট্রাফিক বিভাগ, পেট্রল টিম সবাই মিলে যৌথভাবে আমরা এই অভিযান চালাচ্ছি।

তাহলে এই অভিযানে ফুটপাত দখলমুক্ত হবে বলে আপনি মনে করেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এরকম আশা করেই অভিযান চালাচ্ছি। আমরা সেভাবেই অভিযানটা করছি, যেন হঠাৎ করে আবার কেউ বসতে না পারে। আমরা এমন একটি বিষয়কে বেছে নিয়েছি যেটি সাধারণ মানুষের চাওয়া। এটি একদিনের কাজ নয়। পর্যায়ক্রমে আমাদের অভিযান চলবে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা সবসময় কাজ করে যাচ্ছি। ক্রাইম বিভাগের সহযোগী হয়ে আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে একসঙ্গে কাজ করছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি জানান, মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনে অনেকখানি জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। সেটি যদি মহাখালী টার্মিনালের সঙ্গে একীভূত করা যায়, তাহলে অনেকখানি সমাধান হয়ে যাবে। এটা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষ এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। আশা করছি, সহসা এর সমাধান হবে। আর মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার একটা র‌্যাম্প  চালু করা হয়েছে। ওঠার জন্য আরেকটি র‌্যাম্প চালু হলে সড়কের ওপরে আর চাপ থাকবে না।

নগর ও পরিবেশবিদ আকতার মাহমুদ মনে করেন, নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা, নাগরিকের চলাফেরার উপযোগী করার বিকল্প নেই। কী করলে হকাররা সরে যাবেন, সেটা তাদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে, সংশ্লিষ্ট যত স্টেকহোল্ডার আছেন, তাদের সম্মতি নিয়ে চাইলেই এটা করা যায়। সবকিছু আপনি বাসার সামনে কিনতে পারবেন না। কোনও দেশে এমন নেই, সেটা মানুষকে বুঝাতে হবে। একদিনে হবে না, শুরু করলে একদিন হবে।

/এফএস/
সম্পর্কিত
যে কারণে তালা দেওয়া হয়েছিল মেট্রোরেলের গেটে
অচিরেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে
রাজস্ব আদায়ে সব মাইলফলক অতিক্রম করবো: মেয়র তাপস
সর্বশেষ খবর
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ