ঈদ বাজার: ডাকাডাকি করেও ক্রেতা পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

1ঈদ মানেই আনন্দ। আর ঈদের আনন্দ মানেই নতুন জামা, নতুন পোশাক। তাই ঈদের কয়েকদিন আগেই ব্যস্ততা শুরু হয় ফ্যাশন হাউজ ও ফ্যাশন প্রিয় নাগরিকদের মাঝে। কিন্তু এবারের ঈদটা একেবারেই ভিন্ন। করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে ঈদের পুরো বাজার। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান-পাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বহু ডাকাডাকি করেও গ্রাহক পাচ্ছেন না ফুটপাতের হকার কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (১২ মে) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিকালে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন অনেক ক্রেতা। ‘২০০, ৩০০, একদাম, নিয়ে যান’ এমন স্লোগান দিয়েও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না তারা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। আবার ক্রেতাদের অনেকেই জানে না কোথায় গেলে তারা দোকানপাট কিংবা ঈদের কেনাকাটা করতে পারবেন। এখনও অনেক মানুষ মনে করছেন দোকানপাট সেভাবে খোলেনি।

4

গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ভ্যানে করে ঈদের নুতন জামা নিয়ে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন স্বজন উদ্দিন। কিন্তু গ্রাহক না থাকায় বেজায় মন খারাপ তার। কথা হয় এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১০০টির মতো পাঞ্জাবিসহ বেলা ১১টার দিকে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ২টা পাঞ্জাবি বিক্রি করতে পেরেছি। মানুষ নেই। দুই একজন আসলেও তারা কিনতে চান না।

তার পাশেই ফুটওভার ব্রিজের নিজে জামার পসরা নিয়ে বসে ছিলেন আরেক দোকানি ইলিয়াস হোসাইন। তিনিও বললেন প্রায় একই কথা। জানান, আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ খুবই কম। দুই চারজন বের হলেও তারা সামান্য কিছু কেনাকাটা করে চলে যায়। সারাদিনে যেখানে এই সময়ে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো সেখানে এখন দুই দেড়-দুই হাজার টাকারও বিক্রি হচ্ছে না।

তার দোকানের সামনেই কথা হয় আজিমপুর থেকে আসা সাইফুর রহমানের সঙ্গে। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা সাইফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদে বাচ্চাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে অনেক ভয়ে বাসা থেকে বরে হয়েছি। এবার নিজেদের জন্য তেমন একটা কিছু কিনছি না।

2

তবে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে কয়েকটি কাপড়ের দোকানে। এছাড়া শিশুদের আইটেম সমৃদ্ধ দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। সেসব দোকানে উপস্থিতদের বেশিরভাগই নারী।

চাঁদনিচক মার্কেটের সামনে কয়েকটি দোকান খোলা দেখা গেছে। তার মধ্যে একটি খান এন্টারপ্রাইজ। এই দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুপুরের পর থেকে বসেই আছি। এখন সাড়ে ৩টা বাজে। ৪টায় দোকান বন্ধ করে ফেলতে হবে। এক হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি। দোকান খরচও উঠছে না। আমরাও চাই মানুষ বাসায় থাকুক। তবে পেটের তাগিদে দোকান খুলেছি। দোকান একদিন বন্ধ রাখা মানে অনেক ক্ষতি।

5

ঢাকা সুজের দোকানি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তিন থেকে চার মাসে যে পরিমাণ বিক্রি করতে পারি ঠিক সমপরিমাণ বিক্রি আমরা ঈদে করি। কিন্তু এবার স্বাভাবিক দিনের মতোও গ্রাহক পাচ্ছি না। অনেকে দোকান খুলেছেন, তাই আমরাও খুলেছি। 

এদিকে অন্যান্য ঈদে জমজমাট জমে উঠা নগরীর গুলিস্তান, পল্টন, দৈনিক বাংলা ও মতিঝিলসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ফুটপাতে তেমন কোনও দোকানপাট দেখা যায়নি। তবে কোথাও কোথাও কিছু কাপড়ের দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। সেসব এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই ঈদের মৌসুমে স্বাভাবিক দিনের মতোও বেচাবিক্রি হচ্ছে না।

3