গণপরিবহনে যাত্রী সংকট

1করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহনে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। বাস মালিকদের নেওয়া সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপরে সাধারণ যাত্রীরা আস্থা রাখতে না পারায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যাত্রীরা বলছেন, যেসব শর্তে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে, সেগুলোর ধারেকাছেও নেই পরিবহন মালিকরা। এ কারণে তারা গণপরিবহন এড়িয়ে চলছেন। এদিকে যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিবহনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এছাড়া, যাত্রীদের অভিযোগ, করোনাকালের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

আস্থা কমেছে মানুষের

গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ডাকাডাকি করেও নির্ধারিত সংখ্যক যাত্রী পাচ্ছেন না বাস কন্ডাক্টররা। তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে মানুষ গণপরিবহন এড়িয়ে চলছে। অনেকেই হেঁটে যাতায়াতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বাইসাইকেলেও অভ্যস্ত হচ্ছেন। এছাড়া ভাড়া বেশি হওয়ায় মানুষ বাসে উঠছে না।

ফার্মগেটের একটি কারখানায় কাজ করেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা নাসির উদ্দিন। মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকালে তিনি অফিসের প্রয়োজনে ফার্মগেট থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। কিন্তু ১০ মিনিট ধরে স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকলেও ৪০ সিটের বাসটিতে তখনও পর্যন্ত যাত্রী ওঠে মাত্র ১০ জন। যাত্রীরা বাস ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দেন। কিন্তু যাত্রী কম থাকায় বাস ছাড়ছেন না চালক। এ অবস্থায় নাসির উদ্দিন ওই বাস থেকে নেমে যান।

যাত্রী সংকটের বিষয়ে মিডওয়ে পরিবহনের হেল্পার আমির হোসেন বলেন, ‘যাত্রী কম। মানুষ এখন আর  বাসে উঠতে চায় না। সিট ফাঁকা থাকে। তাই মালিকরা বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে যাত্রীরা এখন রিকশা, সিএনজিসহ ছোট পরিবহনে বেশি যাতায়াত করছে।’

ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা শরীফ উদ্দিন চাকরি করেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। জানালেন, আগে বাসে করে অফিসে আসতেন। কিন্তু এখন হেঁটে যাতায়াত করেন। এর কারণ উল্লেখ করে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘গণপরিবহনে যেসব স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে কেবল কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা ছাড়া আর কিছুই মানা হচ্ছে না। মাস্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বাসে ওঠার যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে না। হ্যান্ড সানিটাইজার দেওয়া হয় না। বাসের ভেতরে বারবার জীনাণুনাশক ছিটানোর শর্ত থাকলেও সারাদিনে একবারও ছিটানো হচ্ছে না। এছাড়া, ভাড়াও বেশি নেওয়া হচ্ছে।’

পল্টনের একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন রাজীব হাওলাদার। থাকেন মিরপুরে। করোনা পরিস্থিতির আগে তিনি নিয়মিত গণপরিবহনে যাতায়াত করতেন। এখন করোনা আতঙ্কে বাইসাইকেল কিনেছেন তিনি। রাজীব হাওলাদার জানান, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কা নেই। তাই বাইসাইকেলে করেই এখন যাতায়াত করছেন। এতে একদিকে যেমন তার ভাড়া সেভ হচ্ছে, অন্যদিকে শরীর চর্চাও হচ্ছে।’

2

বেশি ভাড়া আদায়

স্বাভাবিক সময়ে মীরপুর ১০ নম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত বাসের নির্ধারিত যাত্রী ভাড়া হলো ১৭ টাকা। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে নিয়ম না মেনে এই ভাড়া নেওয়া হতো ২৫ টাকা। কিন্তু এখন যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। অথচ আগের ভাড়ার সঙ্গে সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ যুক্ত হলে ভাড়া দাঁড়ায় ৩২ টাকা। শেওড়াপাড়া থেকে প্রেস ক্লাবে যেতে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১৪ টাকা। কিন্তু সেটা অমান্য করে নেওয়া হতো ২০ টাকা। ১৪ টাকার সঙ্গে ৬০ শতাংশ যুক্ত করা হলে ভাড়া দাঁড়ায় সাড়ে ২২ টাকা। কিন্তু এখন আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। সায়েদাবাদ থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৪ টাকা। এর সঙ্গে ৬০ শতাংশ যুক্ত হলে ভাড়া দাঁড়ায় ৩৮ টাকা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৬০ টাকা।

জানতে চাইলে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের হেল্পার আকতার হোসেন বলেন, ‘সরকারি ভাড়া কত সেটা তো জানি না। তবে আমাদের মালিক মিরপুর থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত ৪৫ টাকা নিতে বলেছে, সেজন্য নিচ্ছি। এর বেশি বলতে পারবো না।’

মিরপুর ১২ নম্বর থেকে গুলিস্তান হয়ে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী খাঁজা বাবা পরিবহনের এক চালক নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদেরকে ভাড়ার কোনও তালিকা দেওয়া হয়নি। আগে ৩৫ টাকার মতো ভাড়া নিতাম। এখন ৬০ টাকা করে নিচ্ছি।’

শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসতাম ২৫ টাকায়। কিন্তু এখন সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। শেওড়াপাড়া থেকে ফার্মগেটে নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা করে। একদিন পুলিশকেও অভিযোগ করেছি। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’

যা বললো মালিক সমিতি

যাত্রী সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার কারণে যাত্রী সংখ্যা কমেছে। মালিকরা কম যাত্রী নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে। এর পরেও আমরা জানিয়ে দিয়েছি, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা যাবে না। যারা এমন কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’