ধর্ষণের বিরুদ্ধে উত্তাল শাহবাগ এলাকা

শাহবাগের জাদুঘরের সামনে। (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিতে শাহবাগে মহাসমাবেশ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো। অন্যদিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে ধর্ষণ বিরোধী কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে ছাত্রলীগকে।

শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকাল তিনটা থেকে ধীরে ধীরে সম্মিলিতভাবে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একদল শাহবাগের মহাসমাবেশে যোগ দেয়। অন্যদিকে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য একটি বিশাল মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে উপস্থিত হন।

(ছবি: নাসিরুল ইসলাম)বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাড়াও শাহবাগে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, এনএস ফোরাম, হেল্পিং হ্যান্ডস বাংলাদেশ, সেভ আওয়ার উইমেন, ব্লাড ওয়ালাসহ কয়েকটি সংগঠনকে দেখা যায়। এদিকে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশব্যাপী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নুরুল হক নুরের নেতৃত্ত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদ। 

প্রসঙ্গত, ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণে সহযোগিতায় অভিযুক্ত ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাতে টিএসসিতে অনশন শুরু করে অভিযোগকারী ছাত্রী। তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সেখানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।

টিএসসি এলাকায় ছাত্রলীগের জমায়েত (ছবি: ঢাবি প্রতিনিধি)বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর ৯ দফা

১. সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ নির্যাতন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।

২. পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।

৩. হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।

৪. ধর্মীয়সহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশ নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।

৫. তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।

৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হব।

৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোনও প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ পরিহার করতে হবে।

৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।