ট্রাকস্ট্যান্ডটি এখন দৃষ্টিনন্দন পার্ক

বছরের পর বছর অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডের দখলে ছিল রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড়ের মালিটোলা পার্ক। ট্রাকের দখল থেকে উদ্ধার করে পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসির ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্কটির উন্নয়ন শেষে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এমন একটি ছিমছাম পার্ক পেয়ে খুশি পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।

মালিটোলা পার্ক

সরেজমিন দেখা গেছে, পার্কটি রায় সাহেব বাজার মোড় থেকে তাঁতীবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। একপাশে গুলিস্থান-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোড, আরেক পাশে তাঁতীবাজার রায় সাহেব বাজার রোড।

২৩ দশমিক ৭০ কাঠা আয়তনের পার্কটিতে আছে ফোয়ারা, কফি হাউজ, ওয়াকওয়ে, গ্রিনজোন, পাবলিক প্লাজা, ওভারপাস, বেঞ্চ, এলইডি লাইটিং সিস্টেম, শিশুদের খেলার জায়গা, লেডিস কর্নার, পানি নিষ্কাশনে আরসিসি ড্রেনেজ সিস্টেম, মিনি এসটিএস ও গ্রিনজোনের চারপাশে সবুজ বেড়া।

মালিটোলা পার্ক

এ ছাড়া পার্কের দক্ষিণ-উত্তর পাশের রাস্তার ও তাঁতীবাজার ইন্টারশেকশনের রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে। পার্কটির উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, সংস্থাটির অঞ্চল-৪ এলাকায় সাবেক মেয়রের নেওয়া ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় চারটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পার্কগুলো হচ্ছে- ছিক্কাটুলী পার্ক, বংশাল পার্ক, সিরাজউদ্দৌলা পার্ক ও মালিটোলা পার্ক। এগুলো নির্মাণে ১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এইচএমএইচই ডটএইচসি (জেভি) লিমিটেড। পার্কের কনসালট্যান্ট ছিল সতত্য জেপিজেড (জেভি), সাব-কনসালট্যান্ট-নেক্সট ডোর কনসালট্যান্ট, ডিজাইন করে টিম-রি-ফরম লিমিটেড।

মালিটোলা পার্ক

পার্কটি নির্মাণে ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এইচএমএইচই ডটএইচসি (জেভি) লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২০ জুনে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তাও আটকে যায়। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল এর উদ্বোধন করেন বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

উদ্বোধনের পর বুধবার সন্ধ্যায় পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, দৃষ্টিনন্দন আলোতে সেজেছে পার্কটি। ভিড় করছেন স্থানীয়রা। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকার মানুষ পার্কের মধ্যে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে শ্বাস নিচ্ছেন। পার্কের প্রশংসায় মুখর ছিলেন বেড়াতে আসা সবাই।

পাশের তাঁতিবাজার থেকে পার্কে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শ্রী রাণি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এমন একটি পার্ক উপহার দিতে পারবে তা কখনোই ভাবিনি। আগে তো এই এলাকার পাশ দিয়ে হাঁটা যেত না। ট্রাক চালকরা পুরো পার্কটি দখল করে নেওয়ার পাশাপাশি পার্কে বসে মগ-গাঁজার নেশা চলতো হরদম। ভয়ে ভয়েই পার্কের পাশ দিয়ে বাসায় যেতে হতো। এখন আর তা হবে না।

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর সার্কেল) মুন্সি মো. আবুল হাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একটি আধুনিক পার্কে যেসব থাকা দরকার সবটুকুই রাখা হয়েছে। বুধবার উদ্বোধন শেষে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক মেয়র খোকন। এসব পার্ক ও খেলার মাঠের নকশায় জল ও সবুজের মেলবন্ধন রাখা হয়েছে।