সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী, তবু বদলায়নি রূপনগর

দূর থেকে দেখা যাচ্ছে রূপনগরের ৭ নাম্বার রোডের মুখে একটি দোকানে জটলা, কাছে গিয়ে বোঝা গেলো তারা আড্ডায় মগ্ন। লকডাউনে অফিস বন্ধ, সময় কাটাতে এভাবে কয়েকজন মিলে প্রতিদিন আড্ডা দেন তারা। পাশেই তরমুজের দোকান, না তারা ক্রেতা নন, সেখানেও কয়েকজনের আড্ডা চলছে। তাদের প্রশ্ন করা হলো, ‘ঢাকায় করোনা রোগী সবচেয়ে বেশি রূপনগরে, আপনারা কী জানেন?’ সবার ভাবলেশহীন উত্তর,  ‘ওহ তাই নাকি’!

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (আইএসএস) করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ঢাকায় রূপনগর ও আদাবর এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত সবচেয়ে বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে কতটা বদলেছে রূপনগর? লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে?

রাজধানীর জনবহুল আবাসিক এলাকার একটি রূপনগর। ঘনবসতিপূর্ণ এই আবাসিক এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার ৪৬ শতাংশ। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা গেলো, লকডাউন বলে আদৌ কিছু নেই সেখানে! কাঁচাবাজার, মুদি দোকান যেমন খোলা, তেমনি জামা-কাপড়, স্যানেটারি, হার্ডওয়্যারের দোকানও খোলা। সড়কে যান চলাচল চলছে, কোথাও কোথাও লাগছে রিকশার জট।

এই এলাকায় রয়েছে, বেশ কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, সেগুলোতে কর্মীদের ব্যস্ত চলাচল। আর গার্মেন্টস কর্মীদের  কাজে যাওয়া আসার সময় ফ্যাক্টরির সামনে বসেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। আর বিভিন্ন গলিতে ছোট বড় সব বয়সী মানুষের আড্ডা। কোনও কোনও গলিতে দেখা গেলো, চায়ের দোকানেও জমেছে আড্ডা। বিকালে ইফতার বিক্রির জন্য বসে ভ্রাম্যমাণ দোকান, আর সেখানেও ভিড় চোখে পড়ার মতো।

অনেকের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও, মাস্কবিহীন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। মসজিদে ২০ মুসল্লির নিয়ম মানা হয় না সারা শহরের কোথাও, রূপনগরেও একই চিত্র। বরং নামাজের পর মুসল্লিদের অনেকেই দাঁড়িয়ে গল্প করেন। মসজিদগুলোর সামনে ফেরিওয়ালাদের দোকানও জমে ওঠে নামাজের পর।

রূপনগর আবাসিক এলাকার ৮ নাম্বার রোডের বাসিন্দা জামাল মিয়া। একটি হাউজিং কোম্পানির বিক্রয়কর্মী। লকডাউনের মধ্যে কেন রাস্তায় আড্ডা দিচ্ছেন, জানতে চাইলে জামাল মিয়া বলেন,  আমরা এখানে যারা আছি, সবাই আশপাশেরই, দূর থেকে কেউ আসেনি। আমরা জানি আমাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত নেই।

লকডাউনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে এটি মানা হয় না রূপনগরে। সন্ধ্যার পরও দোকান চলে। কখনও পুলিশ অভিযান চালায়, তখন সাটার নামিয়ে বন্ধ, পুলিশ চলে গেলেই খোলা।

সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও পণ্য, চিকিৎসা, লাশ সৎকার) ব্যতীত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। অথচ এ নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রেই যত উদাসীনতা। রূপনগরের ৮ নম্বর রোডে কয়েকজন কিশোর বসে আছেন। ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ।

সারাদেশের তুলনায় করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি রূপনগরে এটাই জানেন না সেই এলাকার বাসিন্দারা। কথা হয় সেই এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি তো এ কথা আগে শুনিনি। আর এ বিষয়ে তো এ এলাকায় কোনও প্রচারণাও নেই। সরকারি উদ্যোগে লকডাউন বাস্তবায়নে কড়াকড়িও নেই।

পেশায় গাড়িচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা তো সারাদেশেই। রূপনগরে আর কই বেশি, সবাই তো স্বাভাবিক চলাফেরা করতেছে।

ছবি: চৌধুরী আকবর হোসেন