সকালে কড়াকড়ি বিকালে ফাঁকা

লকডাউন চলাকালে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শপিং মল ও গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে গার্মেন্টস, ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। স্বভাবতই এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের ঘরের বাইরে বের হতে হয়। এ কারণে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশিতে পড়তে হয় জরুরি প্রয়োজনে বাইরে আসা কিংবা খোলা থাকা অফিসে কর্মরত ব্যক্তিদের। পুলিশের চেকপোস্টে বাইরে বের হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তাদের কাছে। যৌক্তিক কারণ যারা বলতে পারেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, আর যারা বলতে পারেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে বিকালে এসবের কিছুই ছিল না। চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যদের কাজে ছিল ঢিলেঢালা ভাব। কাউকে তল্লাশি বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়নি। আবার কোনও কোনও চেকপোস্ট ছিল ফাঁকা, পুলিশ ছিল না।  

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় সকাল থেকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে মোহাম্মদপুর ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। সড়কে চলাচলরত ব্যক্তিদের কাছে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চায় পুলিশ। এছাড়া গাবতলী, মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর, টেকনিক্যাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আসাদগেটসহ বেশ কিছু জায়গায় সকালে একই চিত্র দেখা যায়। সকালে যারা বের হয়েছেন,  পুলিশের চেকপোস্টে তাদের ব্যাপক তল্লাশিতে পড়তে হয়েছে।

পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় অবাধে চলছে যানবাহনমোহাম্মদপুর ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট মোকলেসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা মাঠে রয়েছি। যারা অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছেন, তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। অযৌক্তিক কারণে যারা বাইরে বের হয়েছেন, তাদের আমরা জরিমানা করছি, আইন আমলে নিয়ে আসছি। তবে জরিমানা করে জনগণকে সচেতন করা সম্ভব নয়, যদি না তাদের নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বোধ জেগে না ওঠে।’

গাবতলী জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট মোকাব্বির বলেন, ‘আজ  রাজধানীতে গাড়ির চাপ রয়েছে। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। অপ্রয়োজনে যারা বাইরে বের হয়েছেন, তাদের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখেছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে আরও বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে পুলিশের চেকপোস্ট কিংবা যে ধরনের তৎপরতা ছিল, বিকালের চিত্র অনেকটাই তার উল্টো। চেকপোস্টগুলোতে কম রয়েছে পুলিশি তৎপরতা। যানবাহন গন্তব্যে ছুটে চলছে বিনা বাধায়। আসাদ গেট চেকপোস্টে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও দেখা মেলেনি কোনও পুলিশ সদস্যের।  

টেকনিক্যাল মোড়ে পুলিশ কনস্টেবলদের তৎপরতা থাকলেও যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা। কোনও গাড়ি তল্লাশি করতে দেখা যায়নি।

কলাবাগান লাজ ফার্মার সামনেও ছিল একই চিত্র। সকালে এখানে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও বিকালে তা ছিল না।

সকালের দিকে রাস্তায় পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়।এছাড়া মিরপুর ১ নম্বর, মিরপুর ১০ নম্বর, পল্লবী এলাকাসহ  অনেক জায়গায় দেখা গেছে ফাঁকা চেকপোস্ট। বিকালে ঢিলেঢালা ছিল পুলিশি নিরাপত্তা।

মতিঝিল থেকে মিরপুর আসা আরিফ বলেন, ‘সকালে অফিস যাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার চেকপোস্টে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন্তু বিকালে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ বা তল্লাশি ছাড়াই আমি গন্তব্যে এসেছি।’

গাবতলী থেকে আজিমপুরগামী প্রাইভেটকারের চালক মজনু মিয়া বলেন, ‘দুপুরের পর গাড়ি নিয়ে বের হই। কারণ, এ সময় চেকপোস্টে কড়াকড়ি কম থাকে।’

চেকপোস্ট পরিচালনায় সকাল কিংবা বিকাল এ নিয়ে কোনও শিথিলতা নেই উল্লেখ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লকডাউন শুরুর প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, জনসচেতনতা তৈরিসহ সব ধরনের কাজ মাঠে থেকেই করে যাচ্ছে। পুলিশের এই কার্যক্রম লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’

বাইরে বের হওয়ার কারণ যাচাই করে দেখছেন একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাতিনি বলেন, ‘এখানে শিথিলতার কিছু নেই। জরুরি পরিষেবায় অন্তর্ভুক্ত যারা রয়েছেন, তাদের মুভমেন্ট বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্যাংকারদের উপস্থিতি কম ছিল, এই সপ্তাহ থেকে তাদের মুভমেন্ট বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে অনেকে বের হয়েছেন। বিশেষ করে সব মিলিয়ে রোজা রমজানের সময়, আবার অনেকেই মুভমেন্ট পাস নিয়ে ইফতার কিনতে বের হচ্ছেন। এসব কারণে রাস্তায় ভিড় একটু থাকে। পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চেষ্টা করা হয়।’

এদিকে দুপুর একটার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আকতার। বেশ কয়েকটি সিএনজি ও প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে মামলাসহ জরিমানা করা হয়। বিকাল তিনটার দিকে ফের সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম।