করোনা-তাপদাহ উপেক্ষা করে তারা কী কেনে

বুধবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০টা। মার্কেট তখনও পুরোপুরি খোলেনি। নিউমার্কেটের ওভারব্রিজের নিচে কেবল মানুষ আর মানুষ। ফুটপাতের দোকানে কেবল পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। নারী, পুরুষ ও তরুণীরা যেন কেবলই ছুটছেন। তবে মধ্যবয়সী মানুষের ভিড় বেশি।

দুপুর ২টা। একই জায়গায় তিল ধারনের ঠাঁই নেই। টানা কয়েকদিনের তাপদাহে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা দায়। তার ওপরে আছে করোনার সংক্রমণের শঙ্কা। কেনাটাকা করতে আসা মানুষের এসবে কোনও তোয়াক্কা নেই। সামনে ঈদ। মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষজন কেবল কোনোমতে মাস্কটা ঝুলিয়ে কেনাকাটায় নেমেছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শপিং করার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিলেও তা যেন কারোরই কানে ঢুকছে না!

সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ মানছেন না কেউকী কিনছেন আসলে? পুরান ঢাকা থেকে আসা চার জন নারী হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে ওভারব্রিজে উঠছেন। কী কিনলেন, জানতে চাইলে তারা বলেন, এমনিতে রোজার অর্ধেক চলে গেছে। শুরুর দিকে মার্কেট বন্ধ থাকায় ঈদের জামা কেনা হয়নি। এরপরে তো টেইলার কাপড় নেবে না। তাই তাড়াহুড়ো করে গজ কাপড় ও থ্রিপিস কিনে নিয়ে নিলাম।

করোনার মধ্যে ঈদের বাজারে না আসলে হয় কিনা প্রশ্নে চার নারীর একজন বলেন, সবইতো খোলা আছে। বাজারতো খোলা। ঈদে নতুন পোশাক না হলে কীভাবে হয়। জানি না ঈদে কোথাও বেড়াতে বের হতে পারবো কিনা। কিন্তু নতুন পোশাকতো লাগে। পাশে থাকা আরেক তরুণী বলেন, আমরা গতকাল এসেছিলাম। আজ এলাম। আর আসতে হবে না। ম্যাচিং জুয়েলারিও কিনে ফেলেছি।

তাদের মুখে বিজয়ের হাসি।

গাউসিয়া মার্কেটে বুধবার দুপুরের দৃশ্যরাস্তায় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে মাপমতো স্যান্ডেল খুঁজছিলেন শঙ্কর থেকে আসা রিয়াজুল। প্রচণ্ড গরমে শরীরে পোশাকের অনেকটাই ভিজে গেছে। কেন এই অবস্থাতেও শপিংয়ে বের হতে হলো প্রশ্নে তিনি একটু বিরক্তি নিয়েই বলেন, রোজ  সাংবাদিকরা এসব বাজারে বাজারে ঘোরে। করোনার ভয় তো আপনাদেরও থাকা উচিত। মার্কেটতো শপিং করার জন্যই খোলা হয়েছে।

করোনার বিধিনিষেধ ভুলে গেছেন সবাই!সরেজমিনে চাঁদনিচকসহ নিউমার্কেটের ফুটপাত এলাকায় দেখা যায়, কেবল মানুষ আর মানুষ। দিনের তিন ভাগে একই এলাকায়  গিয়ে দেখা যায়, মানুষজন খুব জরুরি কিছু কিনছেন এমন না। ঈদকে সামনে রেখে অন্যবারের মতো নতুন জামা-জুতা কেনাকাটা করতেই এসেছেন। সেইসঙ্গে কিনছেন চুড়ি, ফিতা, কানের দুল আর  হিজাবের ক্লিপও। তাদের বেশিরভাগেরই সঙ্গে মাস্ক থাকলেও তা সঠিকভাবে পরা নেই। কারোরটা থুতনিতে, কারোরটা কেবল মুখ ঢেকে নাক বাইরে রাখা। নেকাব পরেছেন যারা, তাদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। কেবল নেকাব দিয়ে করোনা ঠেকানো যায় কিনা, জানতে চাইলে সালেহা খাতুন বলেন, ‘একই জিনিস।’ কেন এই গরম আর করোনা উপেক্ষা করে শপিংয়ে আসলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় ৯ জন সদস্য। আমরা দু’জন বাজারে এসেছি। বাকিরা বাসাতেই আছে। আমরা সবার জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যাবো।’ কী কিনলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবার জন্য নতুন জামা, মেয়ের জন্য জামার সঙ্গে মেলানো চুড়ি, কানের দুল, বাসার সকলের যা যা লাগে।’

চাঁদনীচকের ফুটপাতে কেনাকাটার ভিড়উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধি-নিষেধ বহাল রেখেই তৃতীয় ধাপে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এরমধ্যেই বিশেষ দাবির মুখে মার্কেট- শপিংমল সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। এরপর দিনই রোজদার ক্রেতাদের হয়রানি কমাতে মার্কেট খোলা রাখার সময় আরেকটু বাড়িয়ে রাত ৮টা করে দেওয়া হয়। চলমান বিধি-নিষেধের মেয়াদ আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার (২৮ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম