জিডিপি নয়, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ

আসন্ন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপির হিসাবের চেয়ে করোনা মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়া ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থানমুখী বাজেট প্রণয়নেও তারা পরামর্শ দেন।

মঙ্গলবার (৪ মে) এক ওয়েবিনারে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, আইসিএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ বড়ুয়া, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, আইসিএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিয়া হাওলাদার, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) প্রেসিডেন্ট রূপালী হক চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন মাসুম, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি শারমিন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

আলোচনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও তা যথাযথভাবে ব্যয় করা, ভোক্তার চাহিদা ধরে রাখা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনকে গুরুত্ব দেওয়া, অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত টিকা কার্যক্রমকে গতিশীল করা এবং দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা, কর কাঠামোর ব্যাপক সংস্কার, করহার কমানো, ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপ করার প্রস্তাবও উঠে আসে। 

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সহযোগিতায় এ আলোচনার আয়োজন করে হিসাববিদদের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। ‘সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরুর সভাপতিত্বে এতে অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী নেতারা আগামী বাজেট নিয়ে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান কর ব্যবস্থায় সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ের পরিবর্তে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া, ঘাটতি অর্থায়ন বাড়ানো এবং এ লক্ষ্যে বিদেশি উৎস থেকে তহবিলের যোগান দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান ভোক্তার ব্যয় বা ভোগ ব্যয় ধরে রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ভোগ পড়ে গেলে উৎপাদন কমে যাবে, ফলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্য ভোগ ব্যয়কে উৎসাহিত করতে বাজেটে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আগামী বাজেটে করোনার টিকাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’ এ লক্ষ্যে বাজেটে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই তা বাস্তবায়ন করা যায়।’

সিপিডি’র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কালো টাকার সুযোগ দেওয়ায় ১২ হাজার কোটি টাকা  অর্থনীতিতে আসছে। কিন্তু এর ফলে নিরুৎসাহিত হয়ে কী পরিমাণ রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে, তা হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান আগামী তিন বছরে কোম্পানির করহার ধাপে ধাপে সাড়ে সাত শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘এটি কমানোর পর যে করহার হবে, তাও বৈশ্বিক গড় করপোরেট হারের তুলনায় বেশি।’

এমসিসিআই সভাপতি ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, ‘১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা হচ্ছে। আর অর্থমন্ত্রী বলছেন, এতে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার তো সেটা ভালো লাগে না। কারণ, আমি সাড়ে ৩২ শতাংশ কর দিই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কর ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে কথা বলি, সেটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক  উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে করহার কমানোর প্রস্তাব দেন।