প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না তিনি কী রকম ভুল করছেন: জাফরুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না তিনি কী রকম ভুল করছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সোমবার (৩১ মে) বেলা সোয়া ১২টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলন থেকে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র-যুব অধিকার পরিষদ।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে দুটি জালিম সরকার আছে। একটা হলো নেতানিয়াহুর, অন্যটি  নরেন্দ্র মোদির। তাই যখন নরেন্দ্র মোদি এসেছে, তখন ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ন্যায্য কাজ করেছে। তাদের গোয়েন্দা বাহিনী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রেখেছে। ঘেরাও করে রাখার  দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে। একটি পরিকল্পনা হলো—বাংলাদেশকে সিকিমে পরিণত করা। অন্যটি আপনারা দেখতেই পেয়েছেন। পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না তিনি কী রকম ভুল করছেন। তিনি বলেছেন, ‘জাতিকে একত্রিতভাবে উন্নতির পথে আসতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীকে আমি অনেকবার বলেছি, সবাইকে ডাকেন, একত্রিত করেন। কিন্তু তিনি ডাকেননি। তিনি সত্যকে ভয় পান। তারপরও আহ্বান করেছেন ভালো। এবার কার্যক্রম দেখান। আপনার এই আহ্বান যদি সত্যিই মনের কথা হয়ে থাকে, তাহলে আগামীকাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেন। দরকার হলে শিক্ষার্থীরা দুই বা তিন শিফটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে। তা না হলে জাতি সিকিমে পরিণত হবে। তার জন্য দায়ী হবেন আপনি।’’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটি জালিম সরকার। মানবতার প্রতি তাদের কোনও কর্ণপাত নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। দেশে সব চলে, কিন্তু তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে আজকের এই সমাবেশে অনেক শিক্ষার্থী থাকতো। তাদের স্লোগানে সরকারের গদি কেঁপে যেতো। তাই তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। আমাদের সব দাবি সরকারের কানে জোর করে ঢুকিয়ে দিতে হবে। যাতে মাথার যন্ত্রণায় তারা দাবি মানতে বাধ্য হয়।’

ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর বলেন, ‘বন্দি ছাত্রদের গ্রেফতার করার সময় নির্যাতন করা হয়, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আমরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই আমাদের শ্রদ্ধেয় অভিভাবকদের। আমরা এখন পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল না, কোনও রাজনৈতিক সংগঠন না। আর আটক ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। সরকারকে বলবো, যতদিন ছাত্রদের মুক্তি না দেবেন, ততদিন আমরা রাজপথে আছি। ’

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ করেছেন। যিনি পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, ভারতের কোটি কোটি মানুষ এখন নরেন্দ্র মোদিকে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করছে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের পরিপূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার আছে—নরেন্দ্র মোদিকে যে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, তার বিরোধিতা করার। আমরা দেখেছি, আপনারা রাস্তায় কী কূটকৌশল গ্রহণ করেছেন। আপনারা এমনভাবে ফাঁদ পেতে পরিস্থিতি তৈরি করলেন, যাতে নিজেরা সন্ত্রাস ও তাণ্ডব তৈরি করে সেটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়। সেভাবে তাণ্ডব তৈরি করে আপনারা আলেম ও ওলামাদের ওপর নির্যাতন করছেন। আপনারা ছাত্রদের গ্রেফতার করেছেন। আপনাদের রাজনৈতিক কৌশল আপনারা চালিয়ে যান, জনগণ একদিন এর জবাব দেবে। কিন্তু পরিষ্কার করে বলতে চাই, আইন-আদালতকে আপনারা যদি রাজনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে বাংলার মানুষ আপনাদের ছাড়বে না।’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য রাখাল রাহা, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান, গণফোরামের সদস্য মোস্তাক আহমেদ, ভাসানী পরিষদের সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, গণফোরামের সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ অনেকে।

সমাবেশ শেষে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলতে শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টে যান তারা।