চেকপোস্ট ঠেকাচ্ছে গাড়ি, হেঁটে যাতায়াত করছে মানুষ

ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলিতে রাস্তার দুপাশেই পুলিশের চেকপোস্ট। আমিনবাজার ব্রিজের মুখে চেকপোস্ট এড়িয়ে ঢাকায় প্রবেশ কিংবা ঢাকা থেকে বের হওয়ার কোনও সুযোগ নেই দূরপাল্লার যানবাহনের। এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িও চেক করছে পুলিশ। সন্দেহ হলে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, করা হচ্ছে মামলাও । তবে চেকপোস্টের পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করছে, আবার কেউ ঢাকা ছাড়ছেন। পায়ে হাঁটা কেউ কেউ প্রকাশ করছেন ক্ষোভ, কেউ টিপ্পনী কাটছেন।

রাজধানীর গাবতলি বাস টার্মিনালে বন্ধ রয়েছে কাউন্টারগুলো। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কোনও বাস ছেড়ে যায়নি এই টার্মিনাল থেকে। বুধবার (২৩ জুন) টার্মিনালে গিয়ে দেখা গিয়েছে সেখানে থাকা সবগুলো বাসের কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।  তবে বাস বন্ধ থাকলেও মানুষের চলাচল থেমে নেই।

বাসের কাউন্টার বন্ধ

রাজধানীর বাইরে প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সেই হারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। তাই ঢাকাকে সুরক্ষিত করতে আশপাশের সাত জেলা- মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে কঠোর লকডাউন চলবে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত। এসব জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশের পাহারা।

গাবতলি গিয়ে দেখা যায়, বাস টার্মিনালে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন সংস্থার কর্মীরা। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনালে কোনও যাত্রী দেখা যায়নি। বাস টার্মিনাল থেকে একটু সামনে এগুলেই আমিন বাজার ব্রিজ। ব্রিজের মুখেই চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। ঢাকার অভ্যন্তরীণ যেসব  গণপরিবহন গাতবলি ছেড়ে সাভারসহ অন্যান্য গন্তব্যে যেতো সেগুলো আমিন বাজার ব্রিজের আগেই গাবতলি থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সাভার, মানিকগঞ্জের যেসব গণপরিবহন আমিনবাজার পার হয়ে গাবতলি আসতো সেগুলোকে ব্রিজ পার হওয়ার আগেই ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল চলাচল দেখা গেছে। এসব পরিবহনে চড়েও কেউ কেউ ঢাকায় প্রবেশ করছেন। পুলিশ চেকপোস্টে এসব গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বেশিরভাগ মানুষ অফিস, চিকিৎসা, স্বজনের মৃত্যুর কথা বলছেন। পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে না। তবে চেকপোস্টের পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকা ছাড়ছেন, ঢাকায়  প্রবেশ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যানবাহন তল্লাশির জন্য। পায়ে হাটা মানুষকে আটকানোর বিষয়ে কোনও নির্দেশনা নেই। একইসঙ্গে আমাদের সঙ্গে এতো জনবলও নেই। প্রত্যেকটি মানুষকে চেক করতে গেলে আরও জনবল প্রয়োজন  হবে।

গাবতলি থেকে চেকপোস্ট পার হয়ে আমিন বাজার ব্রিজের কাছ থেকে দেখা যায় অনেক মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, কার যাত্রী ডাকছে।  সাভার, নবীনগর, বাইপাইল, ধামরাই সব বিভিন্ন জায়গা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে তারা। একইভাবে এসব গন্তব্য থেকে যাত্রীদের গাবতলি নিয়ে আসছে।

রংপুর থেকে ঢাকায়  এসেছেন আদনান। তিনি জানালেন,  রংপুরে থেকে রওনা দিয়েছিলেন রাতে। ৩-৪ দফা গাড়ি বদলে, পায়ে হেঁটে তিনি গাবতলি এসেছেন।  এ পর্যন্ত আসতে তার ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

মোটরসাইকেলে করে  নবীনগর যাচ্ছেন আহমেদ আলী। জানালেন, সেখান থেকে অন্য গাড়িতে উঠবেন। তার গন্তব্য টাঙ্গাইল। ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকা এসেছিলেন তিনি।

ভোগান্তিতে রোগীরা

পঞ্চাশর্ধো বাবার হাত ধরে হাঁটছেন আফসানা।  গরমে, ক্লান্তিতে ঠিক মতো হাটতেও পারছেন না আফসানার বাবা  রমজান আলী। ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করবেন রমজান আলী। ধামরাই থেকে নিয়মিত এসে ডায়ালাইসিস করেন তিনি। আজ যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাকে।  মেয়েকে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গাবতলি পর্যন্ত  এসেছেন তারা।

টাঙ্গাইল থেকে ৬ মাসের বাচ্চার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন আলতাফ ও তার স্ত্রী।  বিভিন্ন পরিবহনে ভেঙে ভেঙে সভারা নবীনগর পর্যন্ত এসেছেন তারা। এরপর পায়ে হেঁটেই গাবতলি। মো. আলতাফ বলেন, বাচ্চার চিকিৎসার জন্য এসেছে, এখন রাস্তায় গাড়ি না থাকায়  অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। পায়ে হেঁটে আসলাম। সামনে বাস পেলে শিশু হাসপাতালে যাবো।  আমাদের অতো   টাকাও নেই যে অ্যাম্বুলেন্সে করে আসবো।