বর্জ্য অপসারণে যে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি

ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ)। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে তাদের এই প্রস্তুতি। তবে এ বছর দক্ষিণ সিটি কোরবানি দেওয়ার জন্য কোনও স্থান নির্ধারণ করে না দিলেও উত্তর সিটি তার নাগরিকদের জন্য ৩০৭টি স্থান চিহ্নিত করে দিয়েছে। বুধবার (২১ জুলাই) দুপুরে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করবে দুই সিটি করপোরেশন। এতে একযোগে মাঠে থাকবে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কর্মী।

উত্তর সিটি বলছে, ঈদুল আজহার সময়ে সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে নাগরিকগণ যাতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে পারে সে লক্ষে ডিএনসিসি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। এবছর বৈশ্বিক করোনা মহামারি বিবেচনায় ডিএনসিসির আওতাধীন ৯টি পশুর হাট বসেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব হাট পরিষ্কার করে ফেলা হবে। 

এ ছাড়া ডিজিটাল পশুর হাটের আয়োজন করা হয়েছে। ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে জনগণ বাসায় বসেই কোরবানির পশু পছন্দ করতে পেরেছে। শুধু তাই নয় ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থাপনায় ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পশু জবাই এবং বাসায় মাংস পৌঁছে দেওয়া হবে।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এবছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত নতুন এলাকাসহ ৫৪ ওয়ার্ডে দুই লক্ষাধিক পশু কোরবানি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। কোরবানির পশু জবাই করার জন্য করপোরেশনের পক্ষ থেকে এবছর ৩০৭টি স্থানে পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার ওপর কিংবা ড্রেনের পাশে কোরবানি না দিতে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র। কোরবানির জন্য ২৫০ জন ইমাম ও ২৫০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি ও বর্জ্য অপসারণ কাজের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মকর্তা বলছেন, জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৪ লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পরে ও  জুমা’র খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ১০টি গাড়ির সাহায্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করা হবে। রেডিও, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হয়েছে।  

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, কোরবানি উপলক্ষে আগত পশু হতে উৎপন্ন বর্জ্য অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাট সার্বক্ষণিক পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক সার্কেল, ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগ, পরিবহন বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয়ের জন্য ২টি সমন্বয় সভা করা হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব দুই হাজার ৬৬৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনাসহ ১১ হাজার ৫০৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত করা হয়েছে।

জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটসমূহ দ্রুত পরিষ্কারের লক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি, ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউটসোর্সিং হতে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত করা হবে। ঈদ উপলক্ষে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নিতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের পূর্বের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দুই দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক, খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপ ভ্যানসহ ৪৯৩টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্বারা যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে জবাইয়ের স্থানে ১১টি ওয়াটার বাউজার দ্বারা তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রেকরণের ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ সম্মানিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ বর্জ্য ব্যাগ, ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার, ১০০৫ ক্যান (প্রতিটি ৫ লিটার) স্যাভলন রয়েছে।

বিভাগটি আরও জানায়, ল্যান্ডফিলে অতিরিক্ত বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২টি পরিখা খনন করা হয়েছে। দিবারাত্রি কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ অতিরিক্ত যান-যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে ৫টি এস্কেভেটর, ৬টি চেইন ডোজার, ১টি টায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার নিয়োজিত রাখা হবে। প্রতিটি বাড়ি হতে দ্রুত বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তদারকি করার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ তদারকিতে ১০টি টিম গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডিএসসিসি। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষও স্থাপন করা হয়েছে।  বুধবার দুপুর ২টা হতে ২৪ জুলাই দুপুর ২টা পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা ও পশুর হাটগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সরেজমিন মাঠ পর্যায়ে তদারকির জন্য গঠিত টিমগুলো কাজ করবে। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমন্বয়ে এই টিমগুলো গঠন করা হয়েছে। 

এ ছাড়াও করপোরেশনের শীতলক্ষ্যা হলে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সচিত্র তদারকির জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে। করপোরেশনের আওতাধীন যে কোন নাগরিক তার নিজ এলাকায় সৃষ্ট বর্জ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রেরণ বা পশুর বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কিত সুরাহার জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে জানাতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তিন শিফটে ১৮ জুলাই দুপুর ২টা হতে ২৪ জুলাই দুপুর ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করবেন।

পাশাপাশি ৯০টি খোলা ট্রাক, ৫৩টি কম্পেক্টর, ১২টি পানির পানির গাড়ি, ১০২টি ডাম্প ট্রাক, ১৪টি পে-লোডার, ৮১টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ৯টি টায়ার ডোজার, ২টি ট্রেলার, ৯টি স্কিড লোডারসহ প্রায় পৌনে ৪০০ যান-যন্ত্রপাতি মাঠ পর্যায়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে নিযুক্ত থাকবে।   

এ ছাড়াও নিয়মিত পাঁচ হাজার কর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও চার হাজার ৯৯০ জন কর্মী কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে নিযুক্ত থাকবে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রতি কাউন্সিলরকে ১ হাজার করে এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে ১ হাজার ৫০০টি পরিবেশবান্ধব থলে প্রদান করা হয়েছে। এসব থলে যারা কোরবানি করবেন তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। 

কোরবানির পশুর বর্জ্য সেসব থলের মধ্যে ভরে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করপোরেশনের নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গের কাছে হস্তান্তর করবেন। পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখতে ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার ও এক হাজার ৮০০ লিটার তরল জীবাণুনাশক ছিটানো হবে।