মোটরবাইক এখন দূরপাল্লার বাহন!

যশোর থেকে জাহিদ হাসান, পাবনা থেকে শহিদুল, দিনাজপুর থেকে নাহিদ আলম ঢাকায় এসেছেন। লকডাউনে বাস চলছে না, তাই বিকল্প পরিবহন হিসেবে মোটরসাইকেলে তারা ঢাকায়  এসেছেন।  টাকা একটু বেশি খরচ হলেও কোনও বাধাবিপত্তি ছাড়াই তারা ঢাকায় চলে এসেছেন।

রবিবার (২৫ জুলাই) দিনভর গাবতলীতে দেখা গেলো, যারা ঢাকায় আসছেন তাদের অধিকাংশ মোটরসাইকেলে এসেছেন। যারা ঢাকা ছাড়ছেন তারাও মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন। তবে মোটরসাইকেলে এলেও তাদের কয়েক দফা ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। আর যাদের নিজের মোটরসাইকেল আছে, তারা আসছেন সরাসরি। আমিনবাজার ব্রিজের ওপর যাত্রী নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকছেন ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলগুলো। এসব মোটরসাইকেল দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ফেরিঘাট আর উত্তরবঙ্গের মানুষদের চান্দুরা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।

গাবতলিতে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়

যাত্রীরা বলছেন,  বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে চাইলেও ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সময় মতো। লম্বা পথ একই মোটরসাইকেল না এলেও কয়েক দফায় মোটরসাইকেলে ভরসা। যদিও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।

আমিনবাজার ব্রিজের ওপর মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। হাঁকডাক দিয়েই যাত্রী ডাকছেন চালকরা। গাবতলীতে আমিনবাজার ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের চেকপোস্ট। অন্যদিকে আমিনবাজার ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে থেকে একটু দূরেই ঢাকা জেলা পুলিশের চেক পোস্ট। অনায়াসে ঢাকা জেলা পুলিশের চেকপোস্ট পার হয়ে যাত্রী নামাচ্ছে ব্রিজের কাছে। তবে যাত্রী নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের চেকপোস্ট পার হওয়ার চেষ্টা করে না মোটরসাইকেলগুলো।

পাবনা থেকে ঢাকায় এসেছেন মজিবুর আহমদ। প্রথম একটি মোটরসাইকেলে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছেন, তারপর আরেক মোটরসাইকেলে চড়ে টাঙ্গাইল। এরপর কিছুটা পথ ভ্যানে। আবারও পেয়ে গেলেন  মোটরসাইকেল। সেটিতে চড়ে একেবারে আমিনবাজার পর্যন্ত আসেন তিনি। মজিবুর বলেন, রাস্তায় গাড়ি নেই, তাই মোটরসাইকেলই ভরসা। ভেঙে আসতে হয়েছে, এজন্য সময়ও বেশি লেগেছে।

রিকশা-ভ্যানে চড়ে বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুর সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এসেছেন সবুজ কুমার রায়। সেখান থেকে চান্দুরা পর্যন্ত আসতে মোটরসাইকেলে ১৫০০ টাকা ভাড়া দিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক যাত্রী। তিনিও দিয়েছেন ১৫০০ টাকা। আর চান্দুরা থেকে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়েছেন তিনি।

মোটরসাইকেল চালকরা জানালেন, মূলত যারা উবার পাঠাওয়ে কাজ করতেন তারাই বেশি যাত্রী পরিবহন করছেন। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি হারিয়ে, ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়া অনেকেই আয়ের জন্য এসেছেন এ পথে।

হাফেজ মাসুদুর রহমান সাভারে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। এখন মাদ্রাসা বন্ধ তাই আয়ও নেই। পরিবারের খরচ জোগাতে মোটরবাইকে যাত্রী পরিবহন করেন তিনি। মাসুদুর রহমান বলেন,  বেঁচে থাকতে একটা কাজ করতে হবে। চাইলে তো কোনও ব্যবসা করতে পারবো না, আমার পুঁজি নেই। তাই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করছি।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। কঠোর বিধিনিষেধে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হলে তাকে শাস্তির আওতায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার।