লকডাউনে বন্ধ মার্কেট ও দোকানে চলছে ‘বিকল্প’ লেনদেন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। জরুরি সেবা ব্যতীত বন্ধ ঘোষণা করা হয় সকল শপিং মল ও দোকানপাট। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ জারি করা থাকলেও এরইমধ্যে নানা কৌশলে যে যেভাবে পারছেন দোকান খোলা রাখা ও কেনাবেচা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

রাজধানীতে মোবাইল বিক্রি ও সারাইয়ের অন্যতম বড় মার্কেট মোতালেব প্লাজা। চলমান লকডাউনে বন্ধ থাকলেও সকাল ১০টার পর থেকেই এই মার্কেটের সামনে দোকানের কর্মচারীদের আনাগোনা দেখা যায়। নতুন মোবাইল লাগবে? কিংবা ভেঙে গেছে মোবাইলের স্ক্রিন? ‑ মার্কেটের সামনে গেলে মিলবে সমাধান। কিংবা অনলাইনে কেনাবেচা চলছে? শাড়ি লাগবে কিংবা কাপড়ের থান? শপিং মলের ভেতর থেকে অথবা গোডাউন থেকে তাও পৌঁছে যাবে আপনার বাসায় ঠিকঠাক।

image3(1)

আবার আবাসিক এলাকা কিংবা পুরান ঢাকার সারি সারি দোকানে নেওয়া হয়েছে আরেক কৌশল। শংকর, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের নানা এলাকা ঘুরে দেখা যায় দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা থাকে। কোনওটা বা পুরো বন্ধ। কিন্তু দোকানের সামনে বা আশেপাশে রয়েছেন দোকানি। ক্রেতা দেখলে প্রয়োজন জেনে নিয়ে টুপ করে দোকানের ভেতর থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সদাই।

একদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ, আরেকদিকে জীবিকার তাগিদে মানুষের এই চোর-পুলিশ খেলা। এতে করে সংক্রমণ আসলে কমবে না বলে শঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের। তারা বলছেন, যাদের জন্য এতো বিধিনিষেধ তারাই যদি বিষয়ের গুরুত্ব না বুঝতে চান তাহলে সবাই মিলেই বিপদে পড়তে হবে।

image0(2)

গত ২৪ ঘণ্টায় (স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৯ জুলাইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী) করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩৯ জন। তাদের নিয়ে করোনাতে সরকারি হিসাবে মোট মারা গেলেন ২০ হাজার ২৫৫ জন।

একই সময়ে করোনাতে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৭১ জন। দেশে সরকারি হিসেবে করোনাতে মোট শনাক্ত হলেন ১২ লাখ ২৬ হাজার ২৫৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩৯ জনের মধ্যে শনাক্ত হওয়া ১৫ হাজার ২৭১ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রোগীর মৃত্যু এবং সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে।

image4

কথা হয় মোতালিব প্লাজার এক দোকানীর সঙ্গে। তিনি জানান, পরিচিতদের মধ্যে, অনলাইনে যারা যোগাযোগ করতে পারছেন তারা সেবা পাচ্ছেন। দিনের পর দিন দোকান বন্ধ রাখলে তাদের চাকরি থাকবে না বলে কর্মচারীরা রিস্ক নিয়ে মার্কেটের সামনে থাকেন।

মোহাম্মদপুরের এক ইলেক্ট্রিকের যন্ত্রপাতির দোকানের কর্মচারী বসে ছিলেন দোকানের সামনে। শুরুতে ক্রেতা ভেবে এগিয়ে এলেও সাংবাদিক শুনে আর কথা বলতে চাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের শাটার লাগিয়ে সামনে থাকতে বলা হয়েছে। ফোনে অর্ডার করা হলে দোকানে ঢুকে মাল নিয়ে আবার শাটার ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ টহলে এলে আশেপাশের গলিতে অবস্থান নেন সকলে।

image1(1)

ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ থাকার কথা থাকলেও লুকিয়ে দোকান-শপিং মল খোলার চেষ্টা হওয়ার কথা অস্বীকার করছেন না খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শপিং মলগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে অনেক সময় আমরা শুনতে পাই শপিং মল খোলা রাখা হচ্ছে এবং পুলিশের তৎপরতা দেখলে বন্ধ করে তারা সরে যাচ্ছেন। মোতালেব প্লাজার বিষয়ে আপনি যে বিষয়টি আমাদেরকে অবহিত করেছেন সে বিষয়ে আমরা আরও খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই‑ আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকে আমাদের সাথে চোর-পুলিশ খেলা শুরু করে।