চরম অব্যবস্থাপনায় নাকাল রাজধানীর হাতিরঝিল। প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে উপচে পড়ছে গৃহস্থালী ও দোকানের বর্জ্য। ড্রেনগুলোর ওপর লোহার গ্রিলও চুরি হয়ে গেছে। অরক্ষিত ওয়াকওয়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। প্রকল্প এলাকাজুড়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ১১টি স্পেশাল সুয়ারেজ ডাইভারসন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) এরই মধ্যে ব্লক হয়ে গেছে। এত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দের অভাবে বিশেষ কিছু করতে পারছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকারও করেছে সংস্থাটি।
সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৩০ জুন রাজউকের কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। এর পর কেটেছে ছয় মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু অবহেলায় প্রকল্প এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা দুর্গতি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় আশপাশের মানুষ এসে ময়লা ফেলছে হাতিরঝিলে। মধুবাগের বেগুনবাড়ি এলাকার ওয়াকওয়ের ওপর নির্মিত ড্রেনগুলোর গ্রিল খুলে নেওয়া হয়েছে। বে-খেয়ালে চললে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন পথচারীরা। ঝিলের বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্তভাবে মলমূত্য ত্যাগ করতেও দেখা গেছে অনেককে।
রাজউক জানিয়েছে, প্রকল্প হস্তান্তরের আগে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে জটিলতার কথা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপিপিতে কোনও বরাদ্দ বা নির্দেশনা ছিল না। এ জন্য বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা দরকার। প্রকল্প এলাকায় দোকানপাট বরাদ্দসহ অন্যান্য খাত থেকে ১০ কোটি টাকা আসে। ঘাটতি মেটাতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজউককেই এই খরচ দিতে হবে।
প্রকল্পটি নিয়ে গত ২০২০ সালের ২ জুন রাজউক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা হয়।
এ লক্ষ্যে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পরিচালনার জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়। বাৎসরিক পরিচালন স্কিমও প্রস্তাব করা হয়। সম্ভাব্য আয় ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। পরিচালনা ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি টাকার। যা সরকারি কর্মসূচি ব্যয় হিসেবে সংগ্রহ করতে স্কিম তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তখন মন্ত্রণালয় রাজউককেই এই অর্থের সংস্থান করতে বলে।
রাজউক জানিয়েছে, ঢাকার একটি বৃহৎ এলাকার ‘ক্যাচমেন্ট বেসিন’ হিসেবে হাতিরঝিলের লেকটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হলে ঢাকার একটি বড় অংশে জলাবদ্ধতা হবে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য তিন শিফটে ১৭১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা ও গাছের নিরাপত্তায় ৫৬ জন কর্মী রয়েছে। সব মিলিয়ে আছে ২২৭ জন। এদের পেছনেও মাসে ব্যয় প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি। প্রকল্প এলাকার অনেক সমস্যা রয়েছে। আশপাশের মানুষরা সচেতন নয়। তারা ময়লা ফেলে চলে যায়। চেষ্টা করছি এসব বন্ধ করতে। সম্প্রতি কয়েক ট্রাক ময়লা অপসারণ করেছি। তাছাড়া এসএসডিএসগুলো ময়লা জমে ভরাট হয়ে গেছে। সেগুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে।’