নাগরিক সেবার সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগ নারী কাউন্সিলরদের

মশা নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররা। তাদের অভিযোগ, মশককর্মী, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি, পরিচ্ছন্নকর্মী ও অন্যান্য উপকরণ সবই থাকে সাধারণ কাউন্সিলরদের অধীনে। কর্মীদের কাজ তদারকি ও হাজিরার দায়ভারও থাকে তাদেরই হাতে। তাই তাদের পক্ষে এসব কার্যক্রমে অংশ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

নারী কউন্সিলরদের অভিযোগ,  তাদের অনেক কাউন্সিলরের অফিসে সচিব, পিয়ন ও আয়া নেই। এছাড়া সিটি করপোরেশন (কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের দায়িত্ব, কার্যাবলি ও সুযোগ-সুবিধা) বিধিমালা-২০১২ অনুযায়ী, একজন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মতো ওয়ারিশান সনদ, জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদ দিতে পারেন না তারা। তবে তারা সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মতো মাসিক ভাতা ৩৫ হাজার, অফিস ভাড়া ৮ হাজার ও অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য ৪ হাজার টাকা পাচ্ছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১২ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকসানা আলম বলেন, ‘অমার নিজস্ব কোনও অফিস ও সচিব নেই। সিটি করপোরেশনের কাজ নিজের লোকজন দিয়ে করাতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি তিনটা ওয়ার্ডের প্রতিনিধি। আমাকে অন্তত একটি ওয়ার্ডে অফিস দেবে; সেটাও দিচ্ছে না। অমাদের অফিসের জন্য মাত্র ৮ হাজার টাকা ভাড়া হিসেবে দেওয়া হয়। আজকে যে মানুষ বস্তিতে থাকে, সেটার ভাড়াও তো ১২-১৫ হাজার টাকা।’

রোকসানা আলম জানান, সিটি করপোরেশন বিভিন্ন জায়গায় যে অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে, সেখানে শুধু সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নামে অফিস বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৮ নম্বর আসনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর খালেদা আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের কাজ করতে পারা না পারা সাধারণ কাউন্সিলরদের মর্জির ওপর নির্ভর করে।’

তিনি বলেন, ‘কোনও কাউন্সিলরের মন-মানসিকতা ভালো না থাকলে কাজ করা যায় না। কারণ মশা মারার কীটনাশক, যন্ত্রপাতি, লোকজন তাদের অফিসেই। কাজের তদারকি ও হাজিরার ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকে।’

ডিএনসিসির ১৭ নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘সপ্তাহে সাত দিনই সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা মশক কার্যক্রম ও তদারকি করে থাকেন। আমার সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডের নাগরিকরা আমার কাছে আসেন, তাদের সমস্যার কথা বলতে। মশার লার্ভা ও মশা নিধনের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি তাদের এই সেবাটা দিতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের ওয়ার্ডভিত্তিক মশক কার্যক্রমে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম। আমাদের পাঁচ জনও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই, যারা বদ্ধ ড্রেনটা পরিষ্কার করে জলাবদ্ধতা দূর করবে। এ জন্য সিটি করপোরেশনর কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, আমাদের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের নামে জনবল, যন্ত্রপাতি, কীটনাশক বরাদ্দ দেবেন। মশক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিকে আমাদের অংশীদার করতে হবে। সেটা যদি সপ্তাহে একদিন বা দুদিনও হয়।’

ডিএসসিসির ১৪ নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর লাভলী চৌধুরী একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বরাদ্দের ক্ষেত্রে একজন সাধারণ কাউন্সিলর যতটা পান, আমরা তিন ওয়ার্ড মিলে সমান বরাদ্দ পাই। রাস্তার বরাদ্দ আমাদের তিন ওয়ার্ড মিলিয়ে তিনটা, তারা এক ওয়ার্ডে পান তিনটা।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘তাদের দাবিগুলো তাদের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করতে পারে। কারণ এ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষমতা সিটি করপোরেশনের হাতে আছে। তবে সিটি করপোরেশনের সেবা ‌কার্যক্রমে কাউন্সিলরদের সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘কর্মীদের কাজ সরাসরি তদারকি করবে কর্মকর্তারা। কাউন্সিলররা শুধু তদারকি করবেন। কিন্তু কাউন্সিলররা চান কাজটা তারাই করবেন, এটা ভুল চাওয়া।’