পুরান ঢাকায় আগুন

ঘুমের মধ্যে পুড়ে মারা যান হোটেলের ছয় কর্মচারী, মালিক লাপাত্তা

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ছয় জন ‘বরিশাল হোটেলের’ কর্মচারী। তারা রেস্তোরাঁর ওপরের পাটাতনে ঘুমিয়ে ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের পর তারা আর বের হতে পারেনি। সেখানেই পুড়ে মারা যান। পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের পর অতীতে যেভাবে কারখানা ও ভবনের মালিকরা গা-ঢাকা দেয়, এবারও তা-ই হয়েছে। মালিকদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।

সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারের কামালবাগের দেবী দাস ঘাট এলাকার ওই চারতলা ভবনে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনটির নিচতলাতেই ‘বরিশাল হোটেল’ নামে একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে।

রেস্তোরাঁয় দুই শিফটে শ্রমিকরা কাজ করতেন। যারা রাতে কাজ করেছেন, তারা রেস্তোরাঁর দোতলায় দিনে ঘুমাচ্ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় তারা আর বের হতে পারেননি। নিহত ছয় জনই রেস্তোরাঁর শ্রমিক। তবে নিহতদের শরীর পুড়ে যাওয়ায় তাদের পরিচয় তাৎক্ষণিক শনাক্ত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। তাদের মরদেহ পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ নিহতদের নাম বলতে না পারলেও হোটেল কর্মচারীদের স্বজনরা কয়েকজনের নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন। স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, শরিফ (১৫), বিল্লাল (৩৫), স্বপন (২২) ও ওসমান (২৫) নিখোঁজ রয়েছে। আরও কয়েকজন নিখোঁজের কথা শোনা যাচ্ছে।

আব্দুল্লাহ নামে একজন জানান, তার ভগ্নিপতি বিল্লাহকে (৩৩) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমার বোনের স্বামীর নাম বিল্লাহ, তিনি হোটেলের কর্মচারী। তিনি নাইট ডিউটি করে দিনে ঘুমাচ্ছিলেন। আগুন লাগার পর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

রেস্তোরাঁটিতে যেসব শ্রমিক কাজ করতেন তাদের স্বজনরা ঘটনার পর থেকেই ভবনের সামনে ভিড় করছেন। মো. রুবেল নামে এক যুবক অভিযোগ করেন, তার খালাতো ভাই ওসমানকে (২৫) খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার খালাতো ভাই বরিশাল হোটেলে চাকরি করতো। রাতে কাজ করে সে ভবনটির দোতলার পাটাতনে ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু আগুন লাগার পরে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আগুন লাগা ভবনটির দোতলায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা মানুষের হাড়ের মতো কিছু দেখতে পেয়েছি।

ভবনটিতে পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারখানা ছিল। কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম। ঘটনার পর তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

হোটেল মালিক ফখর উদ্দিনকেও ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। তবে তাদের লোকজন ভবনের সামনে ঘোরাফেরা করেছে। তারা কোনও কথা বলতে রাজি হয়নি।

ভবনের মালিক মো. আলম। তার ছেলে রানা ভবনটি দেখাশোনা করে। ঘটনার পর তারাও গাঢাকা দিয়েছে।

ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ছয় জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আগুন লাগার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন তল্লাশি চলছে। তল্লাশি শেষে আমরা নিশ্চিত করতে পারবো কতজন মারা গেছেন।

কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, যে ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেই ভবনের নিচতলায় থাকা বরিশাল হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ভবন নির্মাণের নিয়মনীতি মানা হয়নি। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এত দেরি হয়েছে।

ভবনটির নিচতলায় একটি রেস্টুরেন্ট (বরিশাল হোটেল)। এছাড়া নিচে পলিথিন ও প্লাস্টিকের দানা ও রঙের দোকান। দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় তলায় প্লাস্টিকের খেলনার গোডাউন ও জুতার সোল তৈরির কারখানা ছিল।