উত্তরার দুর্ঘটনার কারণ জানালেন সড়ক সচিব

রাজধানীর উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনার কারণ জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে ১২০ টন ওজনের গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। চার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ঘটনার প্রথম কারণ- ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকায় বক্স গার্ডার সেগমেন্ট হস্তান্তর প্রকল্পের কোনও কাজ ছিল না। তারপরও ঠিকাদার কর্তৃক গার্ডার স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি বক্স গার্ডার হস্তান্তরের পর দ্বিতীয়টি হস্তান্তরের সময় ঘটনাটি ঘটে। তার মতে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা এ জন্য দায়ী। বন্ধের দিন কাজ করার কথা নয়। এটায় তাদের কোনও ওয়ার্ক প্ল্যান ছিল না।

দ্বিতীয় কারণ, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের মধ্যে এই কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তারা ট্রাফিক পুলিশকে কিছু জানায়নি। যদিও তাদের উচিত ছিল ট্রাফিক পুলিশকে জানানো।

তৃতীয় কারণ, দুর্ঘটনাস্থলের একাংশ উঁচু, অপর অংশ নিচু ছিল। ফলে কাজ করার সময় ক্রেনটির একটি চেইন রাস্তার উঁচু অংশে, আরেকটি নিচু অংশে ছিল। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে ক্রেনটি একপাশে উল্টে যায়।

চতুর্থ কারণ, বিকালের দিকে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ে। সেগুলো গার্ডারের খুব কাছে চলে আসে। ক্রেন অপারেটর বিচলিত হয়ে হঠাৎ ব্রেক করলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

তিনি বলেন, আমরা পুলিশকে জানিয়েছি ড্রাইভারকে গ্রেফতার করতে। তার কাছ থেকে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ কাজ তারা আগেও করেছে, তারপরও কেন এটা ঘটলো!

সচিব জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি বলছে, চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছিল। আগের দিন তাদের কনসালটেন্ট ওয়ার্ক প্ল্যান দেয়, গতকাল সেটি করা হয়নি। সাব-ঠিকাদার নিয়োগও করেনি, নিজেদের ড্রাইভার দিয়ে কাজটি করিয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার একেএম মনির হোসেন পাঠান জানিয়েছেন, সড়ক নিরাপত্তা যেকোনও কনস্ট্রাকশন কাজের অন্যতম সেফগার্ড ইস্যু। এগুলো ছাড়া কোনও চুক্তি হয় না। চুক্তির মধ্যে ঠিকাদার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ইস্যুগুলো নিশ্চিত করবে– তখনই সে কেবল তার কাজে যেতে পারবে। সেগুলো নিশ্চিত করছে কিনা, সেটি যাচাই করার জন্য কনসালটেন্ট আছে। প্রজেক্ট পার্সনাল আছে। তারা যাচাই করে দেখবে সেফটি মেজারমেন্টগুলো ঠিক আছে কিনা। যদি সেগুলো ঠিকমতো কাজ করে তাহলে সে কাজ করার অনুমতি পাবে, না হলে পাবে না। দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কনসালটেন্টও আছে। এডিবি সেগুলো মনিটরিং করে।

উল্লেখ্য, ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগ) নীলিমা আখতারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও দুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।