রাজধানীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবৈধ সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড সরাবে কে

ঢাকার রাস্তা, ফুটপাত ও বিভিন্ন স্থাপনায় তাকালেই দেখা যায় অসংখ্য বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, প্রজেক্ট সাইন এবং শপ সাইন— যা একটি শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বিজ্ঞাপন প্রচারের এসব বোর্ড দৃষ্টিকটুভাবে সারা শহরেই ঝুলতে দেখা যায়।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সাইনবোর্ডকে অনুমতি দিয়ে থাকেন। তবে বেশির ভাগ বিজ্ঞাপন বোর্ড অবৈধ। জনবল সংকটের কারণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব বোর্ড একেবারে অপসারণ করা যাচ্ছে না।298919452_1143552103182949_4299810386149975244_n

অপরদিকে, রাজধানীবাসীর অভিযোগ— বিলবোর্ড, বিজ্ঞাপন বোর্ড, সাইনবোর্ড, অবৈধ রোড সাইন, ব্যানার, ফেস্টুন একদিকে যেমন শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, আরেকদিকে এগুলো নগরবাসীর চলাচলে ঝুঁকি তৈরি করছে।

শান্তিনগরের বাসিন্দা আদিলুর রশিদ বলেন, ‘শান্তিনগরে ফ্লাইওভারের দুই পাশের ভবনগুলোতে তাকালে দেখা যায় প্রায় অর্ধশত সাইনবোর্ড। একটি ভবনে হাসপাতাল, ব্যাংক, বীমা আরও কত কি। স্কুল-কলেজের দেয়ালে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, রাস্তায়-ফুটপাতে রোড সাইনের সাথে, এমন কি পুলিশ-বক্সেও বিজ্ঞাপন। কোনও সভ্য দেশে এভাবে চলতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে দেখি ইংরেজি ভাষার সাইনবোর্ড সরাতে আর সারা বছর খোঁজ থাকে না।’

রাজধানীবাসীর অনেকের অভিযোগ রাস্তা ও ভবনে ঝুলে থাকা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপন বোর্ডগুলো ফুটপাতে চলাচলাচলকারীদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।298930064_1896458630557558_3023187593012403815_n

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লতিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৯ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় লক্ষ্মীবাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে একটি দোকানের ওপর থেকে মোবাইল বিপণন কোম্পানির বিলবোর্ড পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মোস্তফা প্রাপ্তির মাথা ফেটে যায়। আরও দুজন শিক্ষার্থী এ ঘটনায় আহত হয়।’

তিনি বলেন, ‘শুনেছি সাইনবোর্ড-বিলবোর্ডের বিষয়গুলো সিটি করপোরেশন দেখে। এখন এই যে হাজার হাজার সাইনবোর্ড আমোদের মাথার ওপর ঝুলছে— এগুলোর দায়িত্ব কে নেবে।’298914745_1216085092569868_7801212893422283664_n

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, কোনও দেয়ালের ওপর কোনও পেনাফ্ল্যাস্ক বা বিজ্ঞাপনের পেইন্ট করতে চাইলে ট্যাক্স দিয়ে করতে হবে। এছাড়াও প্রজেক্ট সাইনসহ যত ধরনের বিজ্ঞাপন আছে তার বেশিরভাগই অবৈধ। এখন এর পরিমাণ এত বেশি যে— আপনি কয়দিন ভাঙবেন। এখন নগরবাসীকেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়। এগুলো অনুমতি ছাড়া লাগানো অবৈধ। এগুলোর জন্য কেউই অনুমতি নেয় না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে— তা সত্ত্বেও যত্রতত্র পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার লাগানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, বর্তমান মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই বছরে আমরা কোনও এলইডি বা ট্রাইভিশন ফুটপাতে বসাইনি। যেগুলো ছিল সেগুলোও জনগণের হাঁটার কথা চিন্তা করে তুলে ফেলা হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা সিটি করপোরেশনের নামে লাগায় তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, মোটের ওপর কিছু ব্যাংক ও দায়িত্বশীল কিছু কোম্পানি আছে যারা ট্রেড লাইসেন্সের সাইনবোর্ড ও শপ সাইনের জন্য কর দেয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট কম। একদিন দেখা যায়— তারা অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য যায়, আরেকদিন যায় অবৈধ রিকশা সরানোর জন্য। আবার কোনদিন খাল উদ্ধারে যায়।'

তিনি যোগ করেন, বিলবোর্ডের বিষয়ে আদালতের একটা নিষেধাজ্ঞা আছে। আমরা এগুলোর অনুমতি দেই না। ফ্লাইওভার ও ফুটওভার ব্রিজে এগুলো থাকলে ভিআইপি চলাচলের নিরাপত্তা ব্যাহত হয়। কিছু লোকজন দিচ্ছে, আমরা কেটে ফেলছি— এভাবে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে।'