ভূগর্ভস্থ বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা উত্তর সিটির

বিভিন্ন সময়ে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) স্থাপন করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার সম্মুখীন হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এমনকি এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। জায়গা না পেয়ে অনেক কেন্দ্র রাস্তার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। আবার যখন রাস্তার উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে, তখন কেন্দ্রগুলো অন্যত্র সরানো হয়েছে।

এ কারণে এবার ভূগর্ভে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করতে চায় ডিএনসিসি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইতোমধ্যে তিনটি জায়গা নির্বাচন করেছে কর্তৃপক্ষ। জায়গাগুলো হলো—আগারগাঁও বিজ্ঞান জাদুঘর-সংলগ্ন রাস্তা, মিরপুর ৬০ ফিট রোড ও বারিধারা কূটনৈতিক এলাকা।

ডিএনসিসির একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রে নির্মাণে সাত কোটি টাকা খরচ হবে। আর বর্তমানে যেগুলো নির্মিত আছে, সেগুলোতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা এস এম শরীফ-উল-ইসলাম বলেছেন, ‌‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ মেশিন ট্যুলস ফ্যাক্টরি এ বিষয়ে কাজ করছে। একটি নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে এখনো এটা অনুমোদিত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘শহরের সবাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চায়, কিন্তু বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র করার জন্য কেউ জায়গা  দিতে চায় না। আমরা বেশ কয়েকটি জায়গায় বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তাই আমরা চাচ্ছি এটা একেবারে ভূগর্ভে নিয়ে যেতে, যাতে কেউ দুর্গন্ধ না পায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) হাজারীবাগ ও মেরাদিয়ায় প্রায়ই একই ধরনের দুটি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। পরে বড় ধরনের কারিগরি ত্রুটির কারণে আর ব্যবহার করা যায়নি।

এ ধরনের স্থানান্তর কেন্দ্রে বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে একটি জায়গায় ফেলার পর সেগুলো  স্বয়ংক্রিয়ভাবে বক্স কনটেইনার চলে আসে। পরে সেগুলো কমপ্যাক্ট করা হয়। তারপর বক্স কনটেইনারগুলো স্কেলের সাহায্যে গাড়িতে ওঠানো হয়। সেখান থেকে ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জায়গা সংকটের জন্য ভূগর্ভস্থ বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিলেও এর জন্য জায়গা বেশি লাগে। কারণ, এর জন্য সংযোগ সড়ক লাগে। তা ছাড়া বিদুৎ ও জেনারেটরে অসুবিধা হলে পুরো কার্যক্রম ব্যাহত হবে।

বিষয়টি জিজ্ঞেস করা হলে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শরীফ-উল-ইসলাম বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে কারিগরি সমস্যা মোকাবিলা করছে, তা আমরা মাথায় রেখে কাজ করবো।’

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং এটির সার্বিক ব্যবস্থাপনাও জটিল। ময়লা লোডিং-আনলোডিংসহ বিভিন্ন অপারেশনাল অ্যাক্টিভিটি করা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য সহজসাধ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আন্ডারগ্রাউন্ড মডেলে এসটিএস স্থাপন করতে গিয়ে সফলতা দেখাতে পারেনি। উত্তর সিটি করপোরেশনের এ থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।’