স্বস্তি নেই ফলের বাজারেও

প্রায় আধঘণ্টা ধরে ফলের দোকানে বিক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করেন ক্রেতা আলতাফ হোসেন (৩৪)। একেকবার একেক ফলের দাম জিজ্ঞেস করেন আর দাম কমানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিক্রেতা কিছুটা রূঢ়ভাবে বলেন, ‘যা নেবেন এক দাম, নিলে নেন নয়তো যান’। শেষে আধাকেজি আম এবং আধাকেজি আঙুর কেনেন আলতাফ হোসেন। তার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের।

তিনি বলেন, ‘দুই বাচ্চা আম আর আঙুর খাওয়ার বায়না করেছে। ওদের মা ফোন করে বলেছে, যেভাবেই হোক, ফল কিনে বাসায় যেতে। ছেলেমেয়েরা ফল খেতে চেয়েছে, এখন যদি না নিয়ে যাই খারাপ লাগবে। এর আগেও অনেক কিছু চেয়েছে। ভুলে যাওয়ার বাহানা দিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। আসলে পকেট ফাঁকা ছিল। এবার উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে ফল কিনলাম।’

আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ছোট একটা চাকরি করে ঢাকা শহরে মা আর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকি। যে বেতন পাই তা বাসা ভাড়া, মায়ের ওষুধ আর ভরণপোষণেই চলে যায়। চাল, ডাল, তরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এত বাড়ছে যে সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের স্কুল ফি, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল—সব দিতে হয়। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চালাতে হচ্ছে। নিজেদের কথা বাদই দিলাম, সন্তানদের ভালো কাপড় কিনে দিতে পারি না। মাঝে মধ্যে বুক ফেটে কান্না আসে। কিছু করার থাকে না।’

ফল কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন সাইফুল ইসলাম (৪২) নামে আরেক ব্যক্তি। বেশ কয়েকবার দরকষাকষির পর তিনি ফল না কিনেই ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সবজির বাজারে আগুন লেগেছে অনেক আগেই। এখন ফলের বাজারেও আগুন। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের আপেল-কমলা কেনার সাধ্য নেই। এখন ঠিকমতো বাজার-সদাই করা যায় না, ফল কিনবো কীভাবে। তবু সন্তানদের কথা চিন্তা করে কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দামে কুলায় না।’

সরেজমিন দেখা যায়, পাইকারি বাজারে যে কাটিমন আমের কেজি ২৫০ টাকা, খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। পাইকারিতে যে কমলা ১১০-১১৫ টাকা কেজি, খুচরায় তার দাম ২৫০ টাকা। আপেল ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও পাইকারি দাম প্রতি কেজি ১৪০ টাকা। অপরদিকে পাইকারি দামের তিনগুণ বেশি দামে আঙুর (৪০০ টাকা) বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারের আশপাশে যারা ফুটপাতে বা ভ্যানে ফল বিক্রি করেন, তারা খুচরা দোকানের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করছেন।

খুচরা ফল বিক্রেতা শাহ আলম (৪০) বলেন, ‘২০ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করি। কখনও মানুষের কাছ থেকে বেশি লাভ করার চেষ্টা করিনি। এখন পাইকারিতে অনেক বেশি দামে কিনতে হয়। ভাড়া দিয়ে মাল আনতে হয়। এর সঙ্গে আছে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, নিজের খাওয়া খরচ। সবকিছু দিয়ে তেমন একটা লাভ থাকে না। আমাদের যেটুকুতে পোষাবে তা-ই রাখার চেষ্টা করি। যে আম, আপেল, কমলা আগে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কিনেছি, এখন তা চারগুণ বেশি দামে কিনতে হয়। একটু লাভ করি, আমাদেরও তো খেয়ে-পরে পরিবার নিয়ে বাঁচতে হবে।’

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন