মেট্রোরেল কমাবে সময়, লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা

মেট্রোরেল চালুর কারণে ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে উত্তরা থেকে চলে আসা যাবে আগারগাঁও পর্যন্ত। থাকবে না যানজটের ভীতি। যা ছিল একসময় স্বপ্নের মতো। আর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটছে বুধবার (২৮ ডিসেম্বর)। মেট্রোরেলের কারণে একদিকে যেমন বাড়বে জনসাধারণের চলাচল সেই সঙ্গে আশপাশের ব্যবসায়ীদেরও বাড়বে বেচাকেনা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বেশ আশান্বিত ও উৎফুল্ল।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উন্নয়নমূলক কাজ চলাকালীন সময়ে রাস্তাঘাট ভাঙা, রাস্তা বন্ধ এবং ধুলাবালির কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মেট্রোরেলের উন্নয়নমূলক কাজ যখন চলমান ছিল তখন অনেকেই কেনাকাটার জন্য মিরপুরের দিকে আসতেন না সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিয়ের কেনাকাটার জন্য রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে বেনারসি পল্লীতে বেচাকেনা ছিল অনেকটাই ঢাল। মেট্রোরেল চালুর কারণে তারা অনেকটা আশার আলো দেখছেন। তবে প্রথম তিন মাস উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সরাসরি মেট্রো চলাচল করবে অন্যান্য স্টপেজে থামবে না। এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, মিরপুর ১০ নম্বরে অন্তত একটি স্টপেজ যেন দেওয়া হয়।

অনেকেই বলছেন, মিরপুরে কোথাও স্টপেজ না থাকলে তথা যাত্রী ওঠা নামার সুযোগ না থাকলে মেট্রোরেল ব্যবহারের কোনও সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। আগের মতই গণপরিবহনে করে বাসে করে চলাফেরা করতে হবে। এ কারণে যানজট তেমন কমবে না। উত্তরা থেকে যারা আসা-যাওয়া করেন বিশেষ করে ধানমন্ডি, ফার্মগেট, কলাবাগানের দিকে যারা চাকরি কিংবা ব্যবসা করেন তারা চালুর পর থেকেই মেট্রোরেলের এই সুবিধা পাবেন। তবে কতটুকু সুবিধা হবে কিংবা কতটুকু সাশ্রয়ী হবে সময় এ বিষয়টি পরেই বোঝা সম্ভব হবে।

মেট্রোরেল

মিরপুর কাজীপাড়ার ব্যবসায়ী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেট্রোরেল চালু হচ্ছে। তবে আমাদের পাশেই একটি স্টেশন রয়েছে। কিন্তু স্টেশনে যদি উঠা-নামা শুরু না হয় তাহলে আমাদের তেমন লাভ হবে না। তবে একটা বিষয় হয়েছে রাস্তাঘাট আগে ভাঙাচোরা ছিল, অনেক ধুলাবালি ছিল এখন রাস্তা ভালো হয়েছে। ব্যবসায় তেমন লাভবান হওয়ার আশা দেখছি না এখন পর্যন্ত।

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ী রোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেট্রোরেল চালু হচ্ছে।  মিরপুর ১০ নম্বরের আশেপাশে উন্নয়নমূলক কাজের কারণে রাস্তা ভাঙাচোরা ছিল এখন অনেকটা ভালো হয়েছে। এখন অনেক কাস্টমার আসছে।  সব মিলিয়ে কাস্টমার আরও বাড়বে বলে মনে করছি। বেচা বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে আমাদের।

মেট্রোরেল প্ল্যাটফর্ম

রাজধানীর মিরপুরের রোকেয়া সরণির ফার্নিচার ব্যবসায়ী নাঈম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এই এলাকায় অনেক ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। আগে রাস্তাঘাট অনেক খারাপ ছিল। একপাশ বন্ধ ছিল। আমাদের দোকান বন্ধ রাখার উপক্রম হয়েছিল। এখন মেট্রোরেল চালুর কারণে নিচের সড়ক অবস্থাও আগে থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। পিচ ঢালা হয়েছে নতুন রাস্তা হয়েছে। সড়কের দুপাশ দিয়েই গাড়ি চলাচল করছে। আশা করি ক্রেতা বাড়বে এখন।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া বসবাসকারী চাকরিজীবী মোস্তাফিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেট্রোরেল চালুর কারণে যানজট কিছুটা কমবে। তবে মেট্রোরেলের পুরো সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে যখন মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে। সেইসঙ্গে প্রতিটি স্টপেজে যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে।

মেট্রোরেলের টিকিট কাউন্টার

এদিকে, রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রো স্টেশন উত্তর থেকে চলাচল করবে মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের কাজ যখন চলমান ছিল তখন থেকেই অনেকে মেট্রোরেল চালুর বিষয় মাথায় রেখেই জমি কিনে রেখেছিলেন আশেপাশে। যার দাম এখন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মেট্রোরেল চালু সঙ্গে সঙ্গে দিয়াবাড়ি এলাকায় মানুষের জীবনযাপন এবং চলাফেরায় উন্নতি হবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। দিয়াবাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসার জন্য লোকজন প্রতিনিয়ত আসেন। মেট্রোরেল চালুর কারণে এখন লোকসমাগম আগ্রহ বাড়বে বলেও আশা করছেন স্থানীয়রা।

মেট্রোরেল প্ল্যাটফর্ম

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা লুৎফর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার অফিস মতিঝিল। মেট্রোরেল চালুর পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাবো। সেখান থেকে কতটুকু যানজটে থাকতে হয় বা কতটুকু সুবিধা হয় পরবর্তীতে সেটা বোঝা যাবে। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কারণে উত্তরা থেকে মহাখালী যেতে রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে যেমন ভাঙাচোরা ধুলাবালি তেমনি আটকে থাকতে হয় যানজটে। মেট্রোরেল চালুর পর যদি সেখান দিয়ে মতিঝিল যাওয়া, আমার জন্য সুবিধার হয় তাহলে আমি অবশ্যই মেট্রোরেল ব্যবহার করবো। আশা করছি, তাড়াতাড়ি যেন উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।

উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকার পান দোকানদার জসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি এই এলাকায় আট বছর ধরে আছি। এসব এলাকায় আগে লোকজন আসতো না সময় কম কম ছিল। মেট্রোরেলের কাজ যখন চলছিল তখন কিছু কিছু লোক আসতো। এখন মেট্রোরেল চালু হচ্ছে অনেক লোকজন এখানে আসছে। আমার বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে।