জমে উঠেছে পুরান ঢাকার ফুটপাতের ঈদ বাজার

পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র আট দিন। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছেন সবাই। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ততা বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। জমে উঠেছে ফুটপাতের ঈদ বাজার। তুলনামূলক অল্প দামে পছন্দের পোশাক, গয়না, জুতা, অন্য প্রসাধনীসহ পছন্দের পণ্য কিনতে পুরান ঢাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন তারা।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাকে মুখরিত ফুটপাতের দোকানগুলো। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সরেজমিনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকার ফুটপাতগুলোয় বিকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মূলত, মার্কেটের তুলনায় কম দামে বাহারি ও প্রয়োজনীয় পণ্য মেলে ফুটপাতের এসব দোকানে।

ফুটপাতের প্রায় প্রতিটি দোকানের চিত্রই একই রকম। কেউ জামা-জুতা কিনছেন, কেউ প্লাস্টিকের পণ্য আবার কেউ কসমেটিকস কিনছেন। পুরান ঢাকার পুরো লক্ষ্মীবাজার জুড়েই জামাকাপড়, বাসার তৈজসপত্র, বিছানার চাদর, কসমেটিকসসহ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্রের পসরা সাজানো। এসব দোকানের মূল ক্রেতা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুটপাতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকজনও কেনাকাটার জন্য আসছেন। কম বাজেটের মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দ এমন বাহারি নকশা ও রঙের সব পোশাকের সংগ্রহ রয়েছে ফুটপাতের দোকানে। তাই ক্রেতাদের কোনও না কোনও জিনিস পছন্দ হচ্ছে আর তা কিনেও নিচ্ছেন। এক দোকানে পছন্দ না হলে অন্য দোকান থেকে কিনেছেন তবে সবার বেচাকেনা ভালো হচ্ছে।

বেচাকেনা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ঢাকা গভ. মুসলিম হাইস্কুল সংলগ্ন ফুটপাতের কাপড়ের দোকানদার মো. রায়হান। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিক্রি ভালো হচ্ছে। দৈনিক ৮-১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করছেন। তার কথায়, আমার দোকানে শুধু ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, টি-শার্ট বিক্রি হয়। ১ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই সব কিছু কেনা যায়। ছোট বড় সবারই প্যান্ট শার্ট আছে। ঈদের আগে বিক্রি আরও ভালো হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

লক্ষ্মীবাজার ফুটপাতে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছিলেন ধোলাইখালের বাসিন্দা রাব্বি। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। কথা বলে জানা যায়, ছোট একটা কম্পানিতে চাকরি করেন রাব্বি। বৌ-বাচ্চা নিয়ে দুই রুমের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সব সময় স্ত্রী ও বাচ্চাদের নতুন কিছু কিনে দেওয়া হয় না। তাই ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করেছেন। ফুটপাত থেকেই বড় মেয়ের জন্য থ্রি পিস, বউয়ের জন্য শাড়ি আর ছোট মেয়ের জন্য জামা কিনেছেন। আর কী কিনবেন তা সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখের ফুটপাত থেকে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে নিজের জন্য একটি শার্ট ও ছেলের জন্য প্যান্ট বাছাই করেন রিকশাচালক আবেদ আলী। কাছে যেতেই হেসে বলেন, একটু বেশি সময় নিয়ে খুঁজলে ফুটপাতে মোটামুটি কম দামে ভালো জিনিস মেলে। তাই দেখে দেখে কিনেছি। সবাই কিনছে। দোকানদারা অনেক ব্যস্ত। এক-দুইবারের বেশি কাপড় দেখাতে বললে বলে অন্য দোকান থেকে নেন। তাই নিজে বাছাই করেছি।

সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলের সামনে থ্রিপিস কিনেছিলেন লামিশা নামের মহানগর মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী। সঙ্গে ছোট বোন। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক সুন্দর ডিজাইনের থ্রিপিস পাওয়া যায়। দাম বেশি না, আবার অতো কমও না। তাই দামাদামি করে নিচ্ছি। বাসায় পারার জন্য এসব থ্রি পিস বেশ মানানসই। সে কারণে এখান থেকেই সবার জন্য নিয়ে নিয়েছি।’