বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা টানা তিন দিন অবরোধের প্রথম দিনে উদ্বেগ ও শঙ্কা নিয়ে চলছে লঞ্চ। রাজধানীসহ মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল কম থাকলেও দক্ষিণাঞ্চল থেকে নৌপথে সদরঘাটে আসা মানুষ ও গণপরিবহনে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে অবরোধ নিয়ে যাত্রী ও চালকদের মাঝেও ছিল উৎকণ্ঠা।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর সদরঘাট ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিকে সবধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সদরঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে চলমান সংহিতার মধ্যে চলাচল করতে তাদের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। বিশেষ করে চলন্ত বাসে আগুনের ঘটনা যাত্রাপথে তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চাঁদপুর থেকে আসা রাশেদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘দেশে দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে যদি আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা ঘরে বসে থাকি, তাতে তো জীবন চলবে না। জীবনের তাগিদেই আমাদের বের হতে হবে, যতই হরতাল-অবরোধ থাক না কেন।’
বরিশাল থেকে আসা শফিক নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাতে আমার মতো সাধারণ মানুষেরা একটা ভয়ের মধ্যে দিন পার করছি। তবে বিগত দিনে হরতাল অবরোধে যে ধরনের সহিংসতা তৈরি হতো সেখান থেকে বর্তমান সময়ে হরতাল অবরোধে সহিংসতার মাত্রা কিছুটা কম।’
এদিকে সকাল থেকেই সদরঘাট এলাকায় পুলিশের উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, অবরোধকে ঘিরে যেকোনও ধরনের সহিংসতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমরা সকাল থেকেই সদরঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছি। প্রতিদিনের মতো সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা অব্যাহত রেখেছি। যাতে কেউ কোনও নাশকতা করতে না পারে।’
এদিকে সদরঘাট এলাকা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীবাহী বাসগুলো অন্যদিনের মতো সকাল থেকেই যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকা বেশ ফাঁকা থাকলেও এই এলাকায় বাসসহ সব সবধরনের যানবাহনের উপস্থিতি ছিল বেশ; যা সদরঘাট এলাকায় থেমে থেমে যানজটেরও সৃষ্টি করেছে। অবরোধকে কেন্দ্র করে সদরঘাট এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সদরঘাট থেকে বাসে ওঠা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবরোধের মধ্যে গাড়িতে চলাচল করতে কিছুটা ভয় কাজ করছে তাদের। কারণ, গত ২৯ অক্টোবর হরতালে বংশাল এরিয়াতে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভয়ভীতি কাজ করলেও নিয়ম মাফিক অফিস করা ছাড়া উপায় নেই তাদের।
তামান্না জেসমিন নামে সাভার পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, ‘অসুস্থ মাকে ডাক্তার দেখাতে ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে যাচ্ছি। কিন্তু অবরোধের মধ্যে বাসে যেতে কিছুটা ভয় কাজ করছে। কখন কী হয়ে যায় বলা তো যায় না।’