আধিপত্যবাদ থেকে ভাষাকে মুক্ত করতে হবে

ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভাষা বাংলা। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। এই ভাষার রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। তবে প্রতিনিয়ত এই ভাষার বানানরীতি, প্রয়োগ নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি আর বিভেদ। ভাষার সঙ্গে আধিপত্যবাদের যে যোগসূত্র, তা থেকে ভাষাকে মুক্ত করতে না পারলে এই বিভ্রান্তি আর বিভেদ থেকেই যাবে বলে।

‘ভাষার রাজনীতি, ভাষার অর্থনীতি’ সেশনে উপস্থিত বক্তারা‘ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৭’-এর শেষ দিনে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনাতায়নে ‘ভাষার রাজনীতি, ভাষার অর্থনীতি’ শিরোনামে এক সেশনে ভাষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন বক্তারা। কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হকের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ লেখক কিন্নর রায়, সেবন্তি ঘোষ এবং বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজ।

আলোচনায় আলতাফ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ভাষা সাধারণত আধিপত্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থনীতি যাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাদের প্রভাবে ভাষাও বদল হয়। ভাষার সঙ্গে শাসন ও শোষণের একটি যোগসূত্র সবসময় রয়েছে। আধিপত্যবাদ বিলোপ করা গেলেই ভাষাকে স্বাধীন করা সম্ভব হবে।’

‘ভাষার রাজনীতি, ভাষার অর্থনীতি’ সেশনে কথা বলছেন আলতাফ শাহনেওয়াজকিন্নর রায় বলেন, ‘আমাদের সমাজে ইংরেজি প্রবণতা চলছে। আমরা অনেক শব্দের বাংলা ব্যবহার না করে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি। সাম্রাজ্যবাদী চেতনায় আমাদের ভাষা আক্রান্ত। এই জায়গা থেকে মুক্তি না পেলে বাংলা ভাষা হুমকির মুখে পড়বে।’

সেবন্তি ঘোষ বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে বাঙালি রয়েছে। কিন্তু তারাও সেখানে বাংলার চর্চা করছে না। সবাই ইংরেজিমুখী। এটিও হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি ইংরেজ ভাষাভাষীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে।’

আলোচকরা নিজ ভাষার চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি এর আত্মমর্যাদার জায়গাটি নিশ্চিত করার দিকে জোর দেন। প্রাণবন্ত এই সেশনের শেষ ভাগে শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকরা।