'পরিবেশ বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা জরুরি'

প্রকৃতি বাঁচাতে হলে মানুষের মধ্যে  বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে৷ এজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রকৃতি সুরক্ষা না পেলে আমার জীবনও সুরক্ষিত হবে না। মানবিক উন্নয়ন সবার আগে দরকার। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

আজ শনিবার (৫ মে) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলা হয়।

বাপার কো-অর্ডিনেটর শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সভাপতি ছিলেন সুলতানা কামাল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন,  কোভিড অতিমারীর মধ্যে মানুষ সব নিয়ম ভেঙ্গে ফেলছে। কারণ রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে দেশের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাবোধ তৈরি হচ্ছে না। ফলে জনসচেতনতা আসবে কোথা থেকে? যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদের এইখানে এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতি বাঁচাতে হলে এই বোধ মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে৷ এজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রকৃতি সুরক্ষা না পেলে আমার জীবনও সুরক্ষিত হবে না। মানবিক উন্নয়ন সবার আগে দরকার। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

ড. কামরুজ্জামান বলেন, ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেই এবার পরিবেশ দিবসে এক লাখের বেশি মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে, এটি ২০১৮ সালের হিসাব;  এরপর ২০১৯, ২০২০ সালের দিকে এসে সেটা আরো বেড়ে এক লাখ ৫০ হাজারের মতো হয়েছে। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় প্রথম ৫ মাসে বেশি বায়ু দূষণ হয়।

করোনায় মাত্র ১৮ ভাগ কমেছে৷ অন্য দেশ ৪০/৫০ ভাগ কমিয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দূষণ সবচেয়ে বেশি। ঢাকা শহরের গাছের উপরে দিনে প্রায় ৪৩৬ মেট্রিক টন ধুলা জমে। একইভাবে সারা ঢাকায় প্রতিদিনে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন ধুলা-বালু জমে। এতে ইকোসিস্টেমের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সালোকসংশ্লেষণ বিঘ্নিত হয়, গাছের ক্ষতি হয়। সরকার যেসব নিরব এলাকা ঘোষণা করেছে, সেখানে ঘোষণার পর শব্দদূষণ আরো দশ ভাগ বেড়েছে। কারণ হচ্ছে ঘোষণা হলেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সাসটেইনেবল গোল পূরণ করতে গেলে আমাদের ইকোসিস্টেম বাঁচাতে হবে। 

অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ইকোসিস্টেমের উপর নির্ভর করে প্রাণিকুলের বেঁচে থাকা। তাই প্রাণিকুলের জন্য ইকোসিস্টেম জরুরি। দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইকোসিস্টেম। আর এ কারণে আগে যেসব প্রাণী আমরা অহরহ দেখতে পেতাম তা আর দেখা যায় না। ইকোসিস্টেম ঠিক করা না গেলে আরো কমে আসবে এদের সংখ্যা। 

ড. মো. জসিম উদ্দিন বলেন,  দূষণ বেশি হচ্ছে এমন এলাকা চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।  পাশাপাশি তরুণদের সচেতন করাও একটা বড় কাজ। ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন জরুরি। নইলে একদিন শহরগুলো বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

শরীফ জামিল বলেন, পৌরসভাগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। যত্রতত্র পলিথিনের ব্যবহার এই ব্যবস্থাকে আরো খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে। বায়ু দূষণে ঢাকা প্রায়ই প্রথম হয়। বায়ু দূষণ অ্যাক্টের খসড়া পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। আমরা এটি দ্রুত চূড়ান্ত হোক তা চাই।

ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, উদ্ভিদের স্বাস্থ্য, প্রাণীর স্বাস্থ্য যদি ভাল না থাকে তাহলে মানুষও ভালো থাকতে পারে না। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। জেলায় জেলায় ওয়েবিনার করা হচ্ছে, লিফলেট দিচ্ছি, পোস্টার দেয়া হচ্ছে যাতে করে পরিবেশ দূষণ কমাতে সবাই সচেতন হয়। আমরা পরিবেশবাদীদের সাথেও মতবিনিময় করছি। সবার মতামত নিয়ে এই দূষণ রুলসটাকে আরো কার্যকর জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। এবারের থিমকে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আশা করছি।