প্লাস্টিক উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে: গবেষণা

প্লাস্টিক প্যালেটে বিষাক্ত রাসায়নিক এবং দূষণকারী পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা মানুষ এবং পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো মানবস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে—যেমন ক্যান্সার বা হরমোনাল সমস্যা (যা এন্ডোক্রাইন ডিসরাপশন নামে পরিচিত), প্রজনন সমস্যা এবং মস্তিষ্কের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ইত্যাদি।। এছাড়াও এসব রাসায়নিক পদার্থগুলো আরও নানাভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং পরিবেশে অনেক দিন বিদ্যমান থাকে। যা  মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য বড় ধরণের ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এছাড়া প্লাস্টিক উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই প্লাস্টিক থেকে রাসায়নিক পদার্থ নির্গমন সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ইন্টারন্যাশনাল পলুটেন্টস এলিমিনেশন নেটওয়ার্কের (আইপেন) সহযোগিতায় এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) প্রধান কার্যালয়ে 'প্লাস্টিক টক্সিক কেমিক্যাল প্রব্লেম: এ গ্রয়িং পাবলিক হেল্থ ক্রাইসিস' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইপেন এবং ইন্টারন্যাশনাল পেল্যাট ওয়াচ (আইপিডব্লিউ) বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশের বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে এক হয়ে একটি গবেষণা করেছে, যেখানে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ এবং দূষণকারী উপাদানগুলো অনুসন্ধান করতে সৈকতে পাওয়া বা উৎপাদনের সময় হারিয়ে যাওয়া প্লাস্টিক প্যালেট এবং ক্রয়কৃত পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক প্যালেট চিহ্নিত করেছে। এই গবেষণাটি ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়।

এই গবেষণার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ থেকে এসডো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে এবং বাজারের পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে প্যালেট স্যাম্পলিং করেছে।

গবেষণাটি মোট ১৮টি যৌগের উপর করা হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে ১১টি ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটাডেন্ট, ৬টি ইউভি-স্ট্যাবিলাইজার এবং বিসফেনল-এ। ১৮টি পদার্থের মধ্যে ১২টি পদার্থেই এন্ডোক্রাইন ডিসরাপশন ক্যামিকেলসর উপস্থিত পাওয়া গিয়েছে।

এসডোর গবেষণা ও বাংলাদেশের ফলাফলে বলা হয়, পরীক্ষিত ৩ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ প্যালেটগুলোতে পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে চারটি যৌগ ছিল—একটি ফ্লেম রিটাডেন্ট, দুটি ইউভি স্টেবিলাইজার এবং বিসফেনল-এ। এই নমুনাগুলোতে এন্ডোক্রাইন ডিসরাপশন ক্যামিকেলের উপস্থিত পাওয়া গেছে। রাসায়নিক দূষণের কারণে এই প্যালেটগুলো নতুন পণ্যগুলোতে ব্যবহারের অনুপযুক্ত।

এসডোর সেক্রেটারি জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে—প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলোর উপর নজর দেওয়া আবশ্যক। তিনি বিভিন্ন রাসায়নিকের প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন "ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটার্ডেন্টস (বিপিএ) সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা টিস্যুতে জমা হয়, ক্যান্সার সৃষ্টি করে, হরমোনাল পরিবর্তন ঘটায়, প্রজনন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে এবং প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে মানসিক ব্যাধি সৃষ্টি করে। এছাড়াও, তিনি শিশুদের খেলনাগুলোতে উপস্থিত এন্ডোক্রাইন-ডিসরাপ্টিং কেমিক্যালস এবং এ দ্বারা তৈরি সমস্যাগুলোর উপর জোর দিয়েছেন, সেইসাথে কীভাবে তা বাচ্চাদের মধ্যে স্নায়ু-আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করে তা ব্যাখ্যা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বেশ কিছু দাবি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্লাটিক উৎপাদনে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, প্লাস্টিকের প্রয়োজনীয় ব্যবহারগুলো চিহ্নিত করতে হবে অন্যান্য উৎপাদন হ্রাস করতে হবে এবং প্লাস্টিক উৎপাদনের অবৃত্তাকার চক্র বন্ধ করতে হবে, প্লাস্টিক উৎপাদনকারীদের এই উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের দায়িত্ব নিতে হবে, প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহারের শেষ পর্যায়ের পরিণতি কি তা নিশ্চিত করতে হবে যাতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, আবর্জনা নির্গত না হয় বা জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান না রাখে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং বর্জ্য রফতানি এবং পুড়িয়ে ফেলা নিষিদ্ধ করতে হবে এবং বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য তহবিল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।