বিশ্বের বাঘ সমৃদ্ধ দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: বনমন্ত্রী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘বাঘ রক্ষায় বিশ্বের ১৩টি বাঘ সমৃদ্ধ দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার বন্য বাঘ সংরক্ষণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে।’ শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে চতুর্থ এশিয়া মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের সমাপনীতে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

মন্ত্রীর আশা, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সম্মেলন। 

পরিবেশমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকার অন্যান্য বন্যপ্রাণীসহ জাতীয় প্রাণী সংরক্ষণে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উন্নতির জন্য সংবিধানে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’তে বাঘ শিকার করলে দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

মো. শাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় বাঘ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি (২০১৭-২০২২) এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে রয়েছে বাঘ জরিপ, জেনেটিক অধ্যয়ন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ড্রোন দিয়ে অত্যাধুনিক টহল ও পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। এছাড়া সুন্দরবন ও বেঙ্গল টাইগারের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বনমন্ত্রীর তথ্যানুযায়ী, বাঘ ও মানুষের মধ্যে সংঘাত প্রশমিত করতে বাংলাদেশ সরকার ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি (সিএমসি) এবং কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ (সিপিজি) গঠন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রমে নিয়োজিত করেছে। বন্যপ্রাণী শিকার ক্ষতিপূরণ বিধিমালা, ২০২১-এ বাঘের আঘাতে নিহত ব্যক্তির জন্য ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার বিধান রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য রোধে বন বিভাগের অধীনে ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট গঠন করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বাড়াতে শেখ কামাল বন্যপ্রাণী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। ভারতের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা জোরদার করেছি এবং ২০১১ সালে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের জন্য একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছি।’ 

গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া সম্মেলনে বন্য বাঘের সংখ্যা এবং এর শিকার স্থিতিশীল করার পাশাপাশি বাঘ সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে নতুন সমস্যা মোকাবিলার মাধ্যমে সংরক্ষণ প্রচেষ্টা জোরদারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাঘ সমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং বাঘের আবাসস্থলের অবক্ষয় রোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– বন্য বাঘ, শিকার এবং আবাসস্থলের নিয়মিত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, বাঘ ও এর শিকার এবং আবাসস্থল রক্ষার জন্য ক্রমাগত এবং পদ্ধতিগত টহল দেওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োগ ক্ষমতা জোরদার, ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে উন্নত প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারসহ সব অংশীজনের জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন জোরদার করা এবং সব স্তরে পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। একইসঙ্গে বাঘ সংরক্ষণের জন্য আন্তঃসীমান্ত এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে দেশগুলো।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মালয়েশিয়ার পানি, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি তাকিউদ্দীন বিন হাসান। এছাড়া ছিলেন ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, নেপাল ও রাশিয়া, লাওসের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং বাঘ সমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।