‘কমিশনকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারলে নদী উদ্ধার সম্ভব’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারলে নদী উদ্ধার সম্ভব হবে। যে সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারণে নদ-নদী ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।

রবিবার (২৪ এপ্রিল) বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন ও জাতীয় নদী জোটের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি'র সাগর-রুনি মিলনায়তনে “বাংলাদেশের নদ-নদী” শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। 

বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং বাপার নদী ও জলাশয় বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খানের সঞ্চালনায় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এতে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, বাপা'র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জাতীয় নদী জোটের সদস্য সাঈদা রোখসানা খান, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ, বাপা'র নির্বাহী সদস্য এমএস সিদ্দিকী, বাপা'র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ন কবির সুমন, বারোগ্রাম সংগঠনের নেতা সাইফুল ইসলাম, বসিলা-বুড়িগঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মানিক হোসেন, ঘাট শ্রমিক সমিতির সভাপতি আমজাদ আলী প্রমুখ। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনগুলোর সদস্যসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মূল বক্তব্যে ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন,  নদ-নদী দখল করলে শাস্তির বিধান আছে কিন্তু এর প্রয়োগ নাই, যার ফলে দখলদাররা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি ২০১৯ সালের একটি উদ্ধার কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, সে সময় ৩২.৩৭% শতাংশ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে সেই উদ্ধার তৎপরতা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। তিনি দ্রুত নদী কমিশনকে শক্তিশালী করাসহ অবশিষ্ট দখলদারদের উচ্ছেদের আহবান জানান। তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে স্বাধীন, স্বয়ংসম্পন্ন, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারলে নদী উদ্ধার সম্ভব হবে বলে মনে করেন।

অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, নদী একটি দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বহন করে। সেই সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে মুছে ফেলা হচ্ছে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের নামে। যে সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারণে নদ-নদী ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে তাদের শাস্তির দাবী করেন তিনি।

শারমীন মুরশিদ বলেন, দেশের নদী দখল ও দূষণের পেছনে দায়ী স্বয়ং রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ও ইন্ডাস্ট্রিগুলো। এর দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। আইন যারা করছে তারাই আইনের তোয়াক্কা করছে না। দেশের নদী আইন বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় নদী জোট কাজ করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সীমানা যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে নদী উদ্ধার তৎপরতা চালানো একটি ত্রুটিপূর্ণ উদ্যোগ। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় বড় দখলদার চিরস্থায়ী বৈধতা পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দখল এবং দূষণ অব্যাহত রেখে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না করে চলমান এ উদ্ধার তৎপরতা দীর্ঘমেয়াদে নদী ও দেশের জন্য মারাত্মক অকল্যাণকর বলে সভায় মন্তব্য করেন শরীফ জামিল।