বায়ুদূষণে মানুষ মেরে ফেলছেন: পরিবেশ অধিদফতরকে হাইকোর্ট

বায়ুদূষণ রোধে আদালত বারবার আদেশ দেওয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলছেন।

এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

এদিন শুনানিকালে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করিম প্রতিবেদন তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের পরেই উচ্চ পর্যায়ে মিটিং হয়েছে এবং তারা বেশ কিছু কার্যক্রম শুরু করেছেন। যার ফলে এই মুহূর্তে পরিবেশ সূচক (ইনডেক্সে) অনুসারে ঢাকার অবস্থান ২৪ নম্বরে রয়েছে।’

এসময় আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এই সূচক তো ঠিক নেই। সকালে একরকম থাকে বিকালে আরেক রকম হয়। এটা তো সময় সময় পরিবর্তন হয়।’

এসময় আদালত বলেন, ‘সূচকে ১ নম্বরে থাকুক আর ২৪ নম্বরে থাকুক, সব মিলিয়ে পরিবেশের সূচকে আমাদের অবস্থান তো ভালো না।’

আদালত আরও বলেন, ‘মিটিং করে কী লাভ, যদি পরিবেশ দূষণ না কমে। এসব বন্ধ করুন। বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলছেন।’

পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে থাকেন, আপনাদের তো সমস্যা নেই। আমাদের তো এখানে থাকতে হয়। এই দূষণে আমাদের তো সমস্যা হয়।’

এসময় পরিবেশ অধিদফতরের আইনজীবী লোকবল সংকট, অভিযান চালাতে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কথা বললে জবাবে আদালত বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে জুডিসিয়ারি থেকে নেবেন। লোকবল সংকটের কথা কি আপনারা জানিয়েছেন?’

গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদফতরের আইনজীবী আদালতকে জানান। তখন আদালত বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশ এবং মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে তো কয়েক মিলিয়ন ডলার হবে। আর আপনি বলছেন ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন?’

আদালত আরও বলেন, ‘যে পরিমাণ জরিমানা আদায় করেছেন, তার থেকে বেশি বেতন নেন, সুযোগ-সুবিধা নেন। আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে। এখন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের। সেটি না করে আপনাদের কি মিটিং আর চা খেতে বলা হয়েছে?’

‘ইটভাটার মালিকেরা আপনাদের ম্যানেজড করে চলে’ উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট কেন থাকবে না? আপনাদের লজিস্টিক সমস্যা বলেননি কেন? আপনাদের কাজে সন্তোষ হওয়ার মতো কিছু নেই। মুনিব না হয়ে তাদের বলেন দেশের সেবক হতে। শুধু হাইপাওয়ার মিটিং করলে হবে না।’

পরিবেশ অধিদফতরের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘দেশের বায়ুদূষণের প্রায় ৩০ শতাংশ দূষণ পার্শ্ববর্তী দেশ হতে আসে।’

তখন আদালত বলেন, ‘ভারতের দিল্লিতে বায়ুদূষণ হয়, কিন্তু তার প্রভাব দেশে আসতে সময় লাগে। এছাড়া আমাদের পাশে আসাম, ত্রিপুরাসহ সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলোতে পরিবেশ বা বায়ুদূষণ কম। এর প্রভাব তেমনটি আমাদের দেশে আসে না। চীনে বায়ুদূষণ বেশি থাকলেও হিমালয়ের কারণে তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে না। হিমালয় আমাদের রক্ষা করে।’

এরপর আদালত ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলায় অবস্থিত সব অবৈধ ইটভাটা দুই সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করে অপসারণের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন।

এর আগে ২০২০ সালে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পরবর্তীকালে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের যেসব নির্দেশনা রয়েছে—তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সেই আবেদনের ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।