বৃষ্টির পানিতে মিশে যাচ্ছে বর্জ্য

রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের শঙ্কা!

বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে বর্জ্য, যা রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করে তুলতে পারে। এমন আশঙ্কার কথা মাথায় নিয়ে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি) একটি গবেষণা করছে। তারা বলছে, অপরিকল্পিতভাবে কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেললে বর্জ্য স্তূপ করে রাখার ফলে ভয়ঙ্কর দূষণের ঘটনা ঘটতে পারে। রাজধানীর বর্জ্যে ৬২ রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে জিএসবি সূত্র।

অব্যবস্থাপনার ফলে যদি এ সমস্ত পদার্থ ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে তা পানযোগ্য পানির ক্ষেত্রে মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃষ্টির পানি স্তূপ করা বর্জ্যের সঙ্গে মিশে গেলে সেই দূষিত পানিকে ‘লিচেট’ বলে। এটি অনেক সময় ভূগর্ভের অভ্যন্তরে গিয়ে সেখানে থাকা পানির সঙ্গে মিশে যায়। এভাবে একবার মিশে গেলে সেখানের পানিও দূষিত হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে যা মানুষের পক্ষে বোঝার কথা নয়। এই পানি পান করলে মানুষ রোগাক্রান্ত হতে পারে।

জিএসবির উপ পরিচালক সেলিম রেজা বলেন, রাজধানীর মাতুয়াইল বর্জ্য থেকে যে লিচেট তৈরি হয় তা ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের কারণ হতে পারে। এই দূষণ থেকে মাতুয়াইলের ভূগর্ভস্থ পানিকে রক্ষা করার জন্য লিচেটের গতির দিক ও এর বিস্তার জানা জরুরি। মাতুয়াইল বর্জ্যের লিচেটের ভূগর্ভস্থ আনুভূমিক এবং উলম্ব বিস্তৃতি নির্ণয় করার জন্যই এই জরিপ কাজটি হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে জরিপ শেষ হতে পারে। আগামী মাসের শুরুতে এই বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে পারবো বলে আশা করছি।

জিএসিবি সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তড়িৎ প্রতিবন্ধকতা জরিপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির আধার নির্ণয়, সংগৃহীত তথ্য/উপাত্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে খনিজ সম্পদের উপস্থিতি ও সম্ভাব্য প্রকৃতি ও গভীরতা নির্ণয়, খনন কূপে ভূ-পদার্থিক লগিং কার্যক্রম পরিচালনা, সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু ঢাকার মাতুয়াইল নয়, বড় শহরগুলোতে যেখানে ময়লার ভাগার রয়েছে তার আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে মানুষের বসতি রয়েছে। এসব মানুষ তাদের নিত্যদিনের পানির প্রয়োজন ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে মিটিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মানুষ যে পানি ব্যবহার করছে তাতে কোনও দূষণ আছে কি না তা নির্ণয় করা জরুরি।

রাজধানী ঢাকা শহরের মধ্যের ডাস্টবিনগুলোর নিচে কনক্রিটের স্তর আছে। তবে বেশিরভাগ জায়গায় যেখানে এসব বর্জ্য ডাম্প করা হয় সেখানে কোনও কনক্রিট নেই। ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে বর্জ্যের মিশ্রণ লিচেট তৈরি করতে পারে। আবার তা মাটির অভ্যন্তরে ছড়িয়েও পড়তে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সারাবিশ্বেই বর্জ্য হয়। তা আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরানো হয়। আমরাও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারি। এছাড়া বর্জ্য তো এখন শক্তি। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা সম্ভব।

তিনি বলেন, শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারাদেশেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থা খুবই খারাপ। নদীর পাড়ে বিশাল বর্জ্যের স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। জিএসবি গবেষণা করছে এটি ভালো কথা। তবে সরকারের উচিত সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা করে এই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। বর্জ্যকে কাজে লাগানোর বিষয়টিতেও আরও জোর দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।