আজ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস

বায়োডাইভারসিটির লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়নই অগ্রাধিকার

বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস আজ সোমবার। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হবে দিনটিতে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাস্তবায়ন করি  অঙ্গীকার, জীববৈচিত্র্য হবে পুনরুদ্ধার’।

বিশ্বের প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নদীভাঙন, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, বহু বন্য প্রাণীর বিপন্ন অবস্থাসহ বেশ কিছু বিষয় এখন সামনে উঠে এসেছে। এ কারণে এবারে দিবসটির গুরুত্ব অনেক বেশি। পাশাপাশি জাতিসংঘের জীববৈচিত্র‍্য সংরক্ষণের সনদের বায়োডাইভারসিটির (সিবিডি) লক্ষ্যগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পালন করাই এখন সরকারের মূল উদ্দেশ্য।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ সেল ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের ২২ মে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বায়োডাইভারসিটি (সিবিডি) চুক্তিতে সই করে।

এরপর ১৯৯২ সালের ৫ জুন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির ধরিত্রী সম্মেলনে সিবিডি বিভিন্ন দেশের স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৬৮টি দেশ সিবিডি চুক্তিতে সই করে এবং সিবিডি ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বর্তমানে এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ১৯৫টি।

বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে উপপ্রধান বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বলেন, জাতিসংঘের জীববৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ সনদে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা ছিল ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার তা ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঠিক করা হয়। এর মধ্যে আবার কভিডের কারণে সব কাজ পিছিয়ে গেলে পরের লক্ষ্য অনুমোদন করা হয় ২০২২ সালে। এই সনদ পাওয়ার পর আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করা। এই চুক্তিতে ২৩টি টার্গেট ঠিক করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪টি গোল ঠিক করা হয়েছে। গোলগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে আর টার্গেটগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সারা বিশ্বের সব দেশের জন্যই এটা বাধ্যতামূলক। 

এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ সরকার হাই এম্বিশন কোয়ালিশনে যোগ দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের এখন জাতিসংঘের জীববৈচিত্র‍্য সংরক্ষণের লক্ষ্যগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করতে যাচ্ছে।

এদিকে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ মন্ত্রণালয় র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হবে। এরপর বন অধিদফতরে হবে আলোচনা সভা।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা আছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের। অন্যদের মধ্যে উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ উপস্থিত থাকবেন।

পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ দেশ গঠনে এবং এর সংরক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য মিলে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের প্রতিবেশব্যবস্থা। জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উপাদান উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিবেশব্যবস্থার ওপর নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। প্রকৃতিতে এদের ভূমিকা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে আমরা প্রতিনিয়ত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছি।

মন্ত্রী বলেন, এই পৃথিবীতে কোনও জীবই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হলে বিপর্যস্ত হবে মানবসভ্যতাও। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই জীববৈচিত্র্যা সংরক্ষণে অগ্রণী হতে হবে। সর্বোপরি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন প্রকৃতির এই আদিমতম সম্পদের অংশীদার হতে পারে, তার দায়িত্বও আমাদেরই নিতে হবে। সুতরাং জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে আরও কার্যকরী ও গতিশীল করতে হলে সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।