রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড় সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্কে নারী নিপীড়ন, সাইবার বুলিং, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদে ‘নারী ও প্রকৃতি নিপীড়ন রুখে দিন’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকালে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’ ও নাট্য সংগঠন ‘বটতলা’ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। পথে-ঘাটে নারীদের হেনস্তা, তাদের পোশাক নিয়ে সমালোচনা, ধর্ষণের হুমকি এবং এসব ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।’ মাগুরায় ধর্ষণ ও হত্যার শিকার শিশুটিসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে তারা বিচারহীনতার সংস্কৃতির তীব্র নিন্দা জানান।
বক্তারা আরও বলেন, ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং হাতিরঝিল জলাধার রক্ষার দাবিতে গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
সমাবেশের শুরুতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিবৃতি পাঠ করেন বটতলার নাট্যকর্মী শেউতি শাহগুফতা। এরপর বক্তব্য দেন ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব এবং বটতলার নাট্যনির্দেশক ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলী হায়দার।
আমিরুল রাজীব বলেন, ‘নারী ও প্রকৃতির ওপর নিপীড়ন রুখতে সরকারের সদিচ্ছা জরুরি। কিন্তু আমরা দেখছি, পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন কিংবা নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চলছে ১০০ দিনের বেশি, অথচ সরকার এখনও নীরব।’ তিনি জানান, আগামী ২৩ মার্চ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিবেশগত বিপর্যয় নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বটতলার মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন, ‘শিল্পীদের দায়িত্ব শুধু বিনোদন দেওয়া নয়, সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াও কর্তব্য। আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা ও প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো।’
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন– নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সমাবেশে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে গানের দল মাভৈ, বেতাল এবং বটতলা। আবৃত্তি করেন সামিনা লুৎফা নিত্রা এবং অনন্যা লাবণি পুতুল। মূকাভিনয় ‘প্রকৃতি ও মানুষ’ পরিবেশন করেন শহীদুল মুরাদ। বটতলা মঞ্চস্থ করে ২০১৫ সালের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে নির্মিত নাটক ‘আর নয় চুপ থাকা’।
সরকারের প্রতি আহ্বান
নারী ও প্রকৃতির ওপর চলমান নিপীড়ন বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আয়োজকরা। তারা জানান, জনগণই শেষ পর্যন্ত এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, যদি সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়।